ভুল ঠিকানার ভালোবাসা

অসম প্রেমের মায়াজাল

 

পর্ব এক অদ্ভুত বন্ধন

অসম প্রেমের মায়াজাল গল্পের দুই চরিত্র তিশা ও আবিরের ইমেজ


()

রাত তখন প্রায় বারোটা।

আবির জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিল। একটা সিগারেট ধরানোর ইচ্ছে হচ্ছিল, কিন্তু হঠাৎই মনে পড়লতিশা পছন্দ করে না ওর ধোঁয়া টানার অভ্যাস।

হেসে ফেলল আবির।

— "বাচ্চা মেয়ে! সবকিছুতেই এত নিয়ম?"

তিশা তখন পাশের ঘরে ঘুমাচ্ছে।

আবিরের বউনাকি এক বাচ্চা মেয়েকে দায়িত্ব হিসেবে পেয়ে যাওয়া?

()

তিশার বয়স মাত্র সতেরো। আর আবির? বত্রিশ!

এত বড় বয়সের ব্যবধানের পরও ওদের বিয়ে হয়েছে!

আবির কখনো এই সম্পর্কটা চায়নি।

চেয়েছিল একটা পরিণত মেয়ে, যার সঙ্গে ওর মানসিকতার মিল থাকবে। কিন্তু পরিবারের চাপে, দাদুর অসুস্থতার কারণে এই বিয়েটা হয়ে গেল।

আর তিশা?

ওর জন্যও ব্যাপারটা সহজ ছিল না।

তিশার স্বপ্ন ছিল প্রেম করে বিয়ে করার, ছোট ছোট সুখ, হাসি, অভিমান নিয়ে একটা নতুন জীবন গড়ার।

কিন্তু কপালে জুটল একজন গম্ভীর, কাজপাগল, রাগী স্বামী!

()

বিয়ের পর তিন মাস কেটে গেছে।

কিন্তু এই বাড়িতে যেন একটা অদ্ভুত নীরবতা!

আবির আর তিশা কথা বলে কম, ঝগড়াও করে না, এমনকি একে অপরের দিকে ভালোভাবে তাকিয়েও দেখে না।

তিশার কাছে আবির একজন "সিরিয়াস বসের মতো" লাগত, আর আবিরের কাছে তিশা "একটা কান্না-কাটির মেশিন!"

কিন্তু ওরা দুজনেই জানত, একসময় এই ব্যবধান কাটিয়ে উঠতে হবে।

()

সেদিন সন্ধ্যায় তিশা বসেছিল বারান্দায়।

আবির অফিস থেকে ফিরল, ক্লান্ত মুখে রুমের দিকে যেতে যাচ্ছিল।

তিশা হঠাৎ বলে উঠল,
— "
আচ্ছা, তুমি আমাকে কেন সহ্য করো না?"

আবির থমকে দাঁড়াল।

— "মানে?"

তিশা চোখ সরু করে তাকাল।
— "
মানে, আমি যা বলি তাতেই তোমার বিরক্তি! আমি যদি না থাকতাম, তাহলে তুমি বেশি খুশি হতে, তাই না?"

আবির দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

— "তুমি এসব কেন ভাবো?"

— "কারণ আমি দেখতে পাচ্ছি!"

আবির কিছু বলল না।

()

তিশা উঠে দাঁড়াল।

— "আমি জানি, এই বিয়েটা তোমার পছন্দ ছিল না। আমারও না। কিন্তু আমরা কি সত্যিই এমনভাবে জীবন কাটাবো?"

আবির এবার চোখ তুলে তাকাল।

— "তাহলে তুমি কী চাও?"

তিশা চুপ করে গেল।

নিজেও জানে না কী চায়।

শুধু এতটুকু বুঝতে পারে, এই নীরবতা আর ভালো লাগছে না!

()

সেদিন রাতে তিশা নিজের রুমে শুয়ে ছিল।

হঠাৎ দরজায় টোকা পড়ল।

— "তিশা…"

তিশা চমকে উঠে দরজা খুলল।

আবির দাঁড়িয়ে ছিল, হাতে একটা ছোট বাক্স।

— "এটা তোমার জন্য!"

তিশা অবাক হয়ে বাক্সটা নিল। খুলতেই দেখলএকটা ছোট্ট ব্রেসলেট!

— "তুমি এটা কেন আনলে?"

আবির মুচকি হেসে বলল,
— "
তুমি বলেছিলে আমি তোমাকে সহ্য করি না। তাই প্রমাণ দিলাম, তোমার কথা আমি ভাবি!"

তিশার বুক ধক করে উঠল।

এই মানুষটা কি আস্তে আস্তে বদলে যাচ্ছে? নাকি এটা শুধুই একটা নতুন মোড়?

more....

পর্ব
- : দূরত্ব না ভালোবাসা?


অসম প্রেমের মায়াজাল গল্পের দুই চরিত্র তিশা ও আবিরের ইমেজ

()

তিশা হাতের ব্রেসলেটটা দেখছিল।

এটা কি সত্যিই আবির ওর জন্য এনেছে? নাকি শুধুই একটা আনুষ্ঠানিকতা?

ওর মনের মধ্যে হাজারটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল।

আবির কি আস্তে আস্তে বদলাচ্ছে? নাকি এটা কেবল সাময়িক এক মুহূর্তের দুর্বলতা?

()

পরের দিন সকালে তিশা উঠে দেখল, আবির ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে আছে।

সাধারণত অফিসে যাওয়ার আগে এক কাপ কফি খেয়েই বেরিয়ে যেত, কিন্তু আজ বসে আছে?

তিশা কিছু না বলে টেবিলে গিয়ে বসল।

আবির হালকা স্বরে বলল,
— "
তোমার ঘুম কেমন হয়েছে?"

তিশা চমকে তাকাল।

এটা প্রথমবার, আবির ওর "ঘুমের খবর" নিচ্ছে!

তিশা ধীর স্বরে বলল,
— "
ভালো।"

আবির কফির কাপ হাতে নিয়ে বলল,
— "
আজ কোথাও বেড়াতে যাবে?"

তিশা এবার একদম হতবাক!

— "মানে?"

— "মানে, তুমি তো সারাদিন বাসায় বসে থাকো। কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না?"

তিশা কেমন যেন সংকোচ বোধ করল।

— "তুমি কি সত্যিই জানতে চাচ্ছো, নাকি শুধু…"

— "আমি সত্যিই জানতে চাই।"

()

তিশা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল।

বুঝতে পারছিল না, আবিরের মধ্যে এই পরিবর্তনটা হঠাৎ কেন?

কিছু না ভেবে আস্তে করে বলল,
— "
আমি পুরোনো বইয়ের দোকানে যেতে চাই
!"

আবির একটু হাসল।
— "
তাহলে চলো, বিকেলে বেরিয়ে পড়ি!"

তিশার বুকের ভেতর কেমন যেন ধুকপুক করতে লাগল।

কি স্বপ্ন দেখছে? আবির কি সত্যিই ওর সঙ্গে কোথাও যেতে রাজি হয়েছে?

()

বিকেলে তারা একসঙ্গে রওনা হলো।

তিশা খুশিতে প্রায় লাফাচ্ছিল!

বইয়ের দোকানে গিয়ে একের পর এক পুরোনো বইয়ের ঘ্রাণ নিচ্ছিল, একটার পর একটা পৃষ্ঠা উল্টাচ্ছিল, আর খুশিতে ছটফট করছিল!

আবির একটু দূর থেকে দেখছিল ওকে।

এই মেয়েটা এত সহজে খুশি হতে পারে! এতটুকু জিনিসেই তার মন ভরে যায়!

হঠাৎ তিশা আবিরের কাছে এল,
— "
এই বইটা তোমার জন্য কিনলাম!"

আবির অবাক হলো,
— "
আমার জন্য?"

— "হ্যাঁ! তুমি তো শুধু ফাইল-পত্র পড়ো! গল্পের বই পড়ো না, তাই ভাবলাম…"

আবির হাসল।

— "আচ্ছা! তাহলে আমি এই বইটা পড়বো!"

()

সন্ধ্যায় তারা একসঙ্গে ফিরল।

গাড়িতে তিশা একদম চুপ।

আবির তাকিয়ে বলল,
— "
কি হলো? চুপ কেন?"

তিশা ধীরে ধীরে বলল,
— "
তুমি কি সত্যিই আমার সঙ্গে এভাবে থাকতে চাইছো? নাকি এটা কেবল একটা দায়িত্ব?"

আবির গভীর দৃষ্টিতে তাকাল।

— "তুমি কী মনে করো?"

তিশা চোখ নামিয়ে ফেলল।

ওর মনে হচ্ছিল, আবিরের জবাব ওর জীবন বদলে দিতে পারে।

আবির আস্তে করে বলল,
— "
আমি নিজেও জানি না, এটা কিসের টানতবে এটুকু জানি, তোমার হাসিটা আমি হারাতে চাই না!"

তিশার গাল লাল হয়ে গেল।

এই অনুভূতিকি ভালোবাসার শুরু?



পর্ব - : দূরত্বের মাঝে নতুন অনুভূতি


বাংলা রোমান্টিক গল্প অসম প্রেমের মায়াজাল কভার ইমেজ

()

তিশার বুক ধুকপুক করছিল।

"তোমার হাসিটা আমি হারাতে চাই না!"

আবিরের বলা কথাটা বারবার মাথার মধ্যে ঘুরছিল।

এটা কি ওর প্রতি ভালোবাসা? নাকি কেবল এক ধরনের যত্ন?

তিশা জানে না, কিন্তু ওর মনে হচ্ছিল, আবিরের প্রতি ওর অনুভূতিটা বদলে যাচ্ছে!

()

সেদিন রাতে তিশা বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল।

বাতাসের ঝাপটায় চুল উড়ছিল, চোখের সামনে আকাশভরা তারা!

হঠাৎ পেছন থেকে আবিরের গলা,
— "
একা একা কী ভাবছো?"

তিশা একটু চমকে গেল।

— "কিছু না…"

আবির ওর পাশে এসে দাঁড়াল।

— "তুমি কি স্বপ্ন দেখো?"

তিশা অবাক হয়ে তাকাল,
— "
মানে?"

— "মানে, ভবিষ্যতে তুমি কী করতে চাও?"

তিশা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল, তারপর আস্তে করে বলল,
— "
আমি চাই আমার একটা ছোট্ট বইয়ের দোকান হোক!"

আবির মুচকি হাসল।
— "
বইয়ের দোকান?"

— "হ্যাঁ! যেখানে পুরোনো বইয়ের ঘ্রাণ থাকবে, শান্ত একটা পরিবেশ থাকবেআমার একদম মনের মতো!"

আবির ওর কথা শুনে চুপ হয়ে গেল।

তিশার স্বপ্ন এত সাধারণ, এত সহজ!

কোনো বিলাসী জীবন চায় না, কোনো বিশাল বড় বাড়ি বা দামি গাড়ি চায় না

শুধু একটা বইয়ের দোকান!

আবিরের মনে এক অন্যরকম অনুভূতি জন্ম নিল।

()

পরের কয়েকদিন আবির আর তিশার সম্পর্ক ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করল।

তিশা আগের মতো আর আবিরকে ভয় পায় না।

আবিরও আর তিশাকে কেবল "বাচ্চা বউ" ভাবে না।

ওরা দুজন কথা বলে, একসঙ্গে সময় কাটায়, কখনো কখনো তর্কও হয়!

কিন্তু সেই তর্কগুলো এখন রাগের চেয়ে ভালোবাসায় ভরা!

()

একদিন তিশা খুব সকালে উঠে দেখল, আবির এখনো ঘুমাচ্ছে।

অবাক হয়ে গেল!

সাধারণত আবির ভোর ছয়টায় উঠে যায়, তারপর অফিসের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

কিন্তু আজ

তিশা ধীরে ধীরে ওর কাছে গেল।

আবিরের চুলগুলো এলোমেলো, নিঃশ্বাস খুব ধীরে উঠছে-নামছে।

তিশার হঠাৎ ইচ্ছে হলো, ওর চুলগুলো ঠিক করে দেয়!

কিন্তু ঠিক তখনই আবির চোখ খুলল!

তিশা একদম জমে গেল!

আবির তাকিয়ে মুচকি হাসল,
— "
আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?"

তিশা একদম লাল হয়ে গেল!

— "- কিছু না!"

তিশা দ্রুত সরে গেল, কিন্তু ওর বুকের মধ্যে যে অনুভূতি জন্ম নিয়েছে, সেটা নতুন!

এটা কি সত্যিই ভালোবাসা?

()

সেদিন বিকেলে আবির হঠাৎ বলল,
— "
তুমি যদি সত্যিই বইয়ের দোকান খুলতে চাও, আমি সাহায্য করব!"

তিশা থমকে গেল।

ভাবেনি, আবির এতটা সিরিয়াস হবে!

— "তুমিতুমি সত্যিই আমাকে সাপোর্ট করবে?"

— "হ্যাঁ, তুমিও তো আমার পাশে থাকো!"

তিশার চোখে পানি চলে এলো।

এই মানুষটা কি সত্যিই বদলে যাচ্ছে? নাকি তিশাই ওর প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে?

জানে না, কিন্তু এটুকু বুঝতে পারছে
আবির আর আগের মতো নেই!

আর তিশাও না!



পর্ব - : দূরত্ব, অভিমান আর অনুভূতির টানাপোড়েন


বাংলা রোমান্টিক গল্প অসম প্রেমের মায়াজাল কভার ইমেজ

()

তিশা জানে না ওর সাথে আসলে কী হচ্ছে।

আবিরের প্রতি ওর মন নরম হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সেই সাথে একটা অদ্ভুত ভয়ও কাজ করছে।

আবির কি সত্যি বদলেছে? নাকি এটা শুধুই সময়ের খেলা?

()

সেদিন রাতে তিশা বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল, চাঁদের আলো ওর মুখে পড়ছিল।

আবির পেছন থেকে এসে বলল,
— "
একা একা কী ভাবছো?"

তিশা ধীরে ধীরে বলল,
— "
একটা প্রশ্ন করবো?"

— "করো!"

— "তুমি কি সত্যি আমাকে মেনে নিয়েছো?"

আবির একটু থমকে গেল।

— "মানে?"

— "মানে, আমাদের বিয়েটা তো হুট করেই হয়ে গেল। তুমি কি আমাকে সত্যি সত্যি স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেছো?"

আবির এক মুহূর্ত চুপ করে থাকল, তারপর আস্তে করে বলল,
— "
তোমার কি মনে হয় আমি এখনো এই সম্পর্কটা মানতে পারিনি?"

তিশা সরাসরি উত্তর দিল না, শুধু বলল,
— "
আমি জানি না…"

আবির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

— "তিশা, আমি হয়তো এখনো ঠিকভাবে বুঝতে পারিনি আমাদের এই সম্পর্কটা কীভাবে সামলাবো, কিন্তু আমি জানিআমি চাই না তুমি আমার জীবন থেকে চলে যাও!"

তিশার বুক ধুক করে উঠল।

()

পরদিন সকালে তিশা রান্নাঘরে সকালের নাশতা বানাচ্ছিল।

আবির অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছিল, কিন্তু হঠাৎ করে চায়ের কাপটা হাত থেকে পড়ে গেল।

তিশা তাড়াতাড়ি দৌড়ে এল,
— "
তুমি ঠিক আছো?"

আবির কপালে হাত রাখল, ওর শরীর গরম হয়ে আছে!

— "তুমি অসুস্থ?"

— "মাথাটা একটু ঘুরছে…"

তিশা ভীষণ দুশ্চিন্তা নিয়ে ওর কপালে হাত রাখল,
— "
তুমি এত জ্বর নিয়ে অফিস যাওয়ার কথা ভাবছো কেন? তুমি রেস্ট নাও!"

— "কিন্তু আজ আমার একটা জরুরি মিটিং আছে…"

— "না! তুমি আজ কোথাও যাবে না!"

তিশার কড়া স্বরে কথা শুনে আবির একটু হেসে ফেলল,
— "
বউ তো বেশ রাগী হয়ে গেছে!"

তিশা চোখ ছোট করে তাকাল,
— "
রাগী হবো না? তুমি নিজের শরীরের দিকে একটু খেয়াল রাখো!"

আবির ওর দিকে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ।

এই মেয়েটা কবে যেন ওর জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে গেছে!

()

সারাদিন তিশা ওর পাশে ছিল।

ওর সেবা করছিল, খেয়াল রাখছিল, কখনো ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ওর কপালে পাতলা কাপড় রাখছিল, কখনো গরম স্যুপ বানিয়ে খাইয়ে দিচ্ছিল।

আবির সবকিছু চুপচাপ দেখছিল।

তিশার চোখে যে যত্ন, সেটাকে কি দায়িত্ববলবে?

নাকি এটা ভালোবাসা?

()

রাতের বেলা আবিরের জ্বর কিছুটা কমেছিল।

তিশা তখনো ওর পাশে বসে ছিল।

আবির ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
— "
তুমি সারাদিন একবারও বিরক্ত হলে না?"

তিশা হাসল,
— "
বিরক্ত হবো কেন?"

আবির মুচকি হেসে বলল,
— "
কারণ তুমি খুব দুষ্টু! সারাক্ষণ ঝগড়া করতে চাও!"

তিশা মুখ ফুলিয়ে বলল,
— "
আমি তোমার সাথে ঝগড়া করি কারণ তুমি সবসময় আমাকে এড়িয়ে চলো!"

আবির হেসে ফেলল,
— "
তাহলে এবার থেকে এড়িয়ে যাবো না!"

তিশার গাল লাল হয়ে গেল।

ওর মন ভরে যাচ্ছিল, কিন্তু সাথে সাথেই একটা ভয় কাজ করছিল

এই সম্পর্কটা কি সত্যিই গভীর হতে শুরু করেছে?

নাকি এটা কেবল কিছু সময়ের মায়া?

পর্ব - : ভালোবাসার স্বীকারোক্তি নাকি দূরত্বের শুরু?


বাংলা রোমান্টিক গল্প অসম প্রেমের মায়াজাল কভার ইমেজ

()

তিশা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল।

ওর চোখে এক অদ্ভুত অনুভূতি
আবির কি সত্যিই বদলে গেছে? নাকি এটা শুধুই সময়ের খেলা?

তিশা জানে না

কিন্তু এটা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছে যে আবিরের প্রতি ওর মন নরম হয়ে গেছে।

হয়তোহয়তো আবিরকে ভালোবেসে ফেলেছে!

কিন্তু

যদি সত্যিই ভালোবেসে ফেলে, আর আবির ওকে কখনো মেনে না নেয়? তাহলে?

এই ভাবনায় তিশার বুকটা কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠল।

()

সেদিন রাতে তিশা আর আবির একসঙ্গে ডিনার করছিল।

হঠাৎ আবির বলল,
— "
তুমি যদি আমার জীবনে না থাকতে, তাহলে আমার জীবনটা কেমন হতো জানো?"

তিশা চমকে তাকাল।

— "কেমন হতো?"

— "একদম ফাঁকা! যন্ত্রের মতো একটা জীবন!"

তিশার গাল গরম হয়ে গেল।

— "তাহলে আমি কি তোমার জীবনে রঙ এনেছি?"

আবির হাসল,
— "
হুম!"

তিশার মুখে একটা বড় হাসি ফুটে উঠল, কিন্তু পরক্ষণেই আবার ভয়টা ফিরে এলো।

আবির কি এটা সত্যি বলছে, নাকি কেবল কথার কথা?

()

পরের দিন তিশা আবিরকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিল,
— "
আজকে অফিসে দেরি হবে?"

আবির মাথা নাড়ল,
— "
না, আজ তাড়াতাড়ি ফিরব!"

তিশার মন খুশিতে ভরে গেল!

কিন্তু বিকেলে একটা ফোন কল সবকিছু বদলে দিল!

()

আবিরের ফোনে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল এল।

তিশা প্রথমে গুরুত্ব দেয়নি, কিন্তু যখন আবির সেই ফোনটা রিসিভ করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল, তখন ওর ভেতরে একটা সন্দেহ কাজ করল।

তিশা চুপচাপ ওর রুমের দরজার কাছে গেল।

আবির নিচু স্বরে কারও সঙ্গে কথা বলছিল।

— "হ্যাঁ, আমি আসছি…"
— "
নাহ, তিশাকে এখন বলা যাবে না…"
— "
দেখা করব, ঠিক আছে?"

তিশার বুক ধপ করে উঠল!

আবির কার সঙ্গে কথা বলছে?

আর "তিশাকে বলা যাবে না" কেন?

()

রাতের বেলা তিশা অপেক্ষা করছিল, কিন্তু আবির বাড়িতে ফিরল না!

ঘড়ির কাঁটা রাত বারোটা ছুঁয়ে গেছে

তিশার চোখে পানি চলে এল।

কি ভুল করেছিল আবিরকে বিশ্বাস করে?

কি সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছে, অথচ আবিরের কাছে ওর কোনো মূল্য নেই?

তিশা জানে না

কিন্তু ওর হৃদয়ে আজ এক ভয়ংকর কষ্ট নিয়ে রাত কেটে যাচ্ছে।

()

সকালবেলা আবির বাসায় ফিরল।

তিশা তখনো জেগে ছিল।

আবির ওকে দেখে বলল,
— "
তুমি ঘুমাওনি?"

তিশার গলা শক্ত হয়ে গেল।

— "তুমি কোথায় ছিলে?"

আবির কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল।

— "একটা কাজ ছিল!"

— "তাহলে আমাকে বললে না কেন?"

আবির এবার বিরক্ত হলো,
— "
তোমাকে সব কিছু বলা লাগবে নাকি?"

তিশার চোখ ভিজে গেল।

— "তুমি কি আমাকে এখনো মেনে নিতে পারোনি?"

আবির এবার চুপ।

তিশা ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল, তারপর ধীরে ধীরে বলল,
— "
তুমি যদি আমাকে ভালো না বাসো, তাহলে বলে দাও। আমি আর আশা রাখব না!"

আবির ওর চোখে তাকিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করল

কিন্তু কিছুই বলল না!

তিশা বুঝে গেল

আবির হয়তো এখনো দ্বিধায় আছে

আর সেই দ্বিধার কারণে ওর হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে।


পর্ব - (শেষ পর্ব): ভালোবাসার পরীক্ষা

বাংলা রোমান্টিক গল্প অসম প্রেমের মায়াজাল কভার ইমেজ

()

তিশার বুকের ভেতর কেমন যেন শূন্য লাগছিল।

আবির কি সত্যিই ওকে মেনে নেয়নি?

নাকি ওর হৃদয়ের কোথাও একটা জায়গা আছে তিশার জন্য, কিন্তু সেটা বোঝাতে পারছে না?

()

সারাদিন তিশা কথা বলেনি।

আবিরও ওকে কিছু জিজ্ঞেস করেনি।

রাতের বেলা তিশা বিছানার কোণে বসে ছিল, আর আবির জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিল।

কথার মাঝে একটা বিশাল দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে!

()

কিন্তু রাত তখনো শেষ হয়নি

ঠিক তখনই আবিরের ফোনটা আবার বেজে উঠল!

তিশার বুক কেঁপে উঠল।

আবার সেই নাম্বার!

আবির ফোন হাতে নিতেই তিশা ধীরে ধীরে বলল,
— "
কে ফোন করেছে?"

আবির এক মুহূর্ত থেমে গেল।

— "একজন পরিচিত…"

— "তুমি কি সত্যিই আমাকে ভালোবাসো না?"

আবির কিছু বলল না।

তিশার চোখে পানি চলে এল।

আস্তে করে বলল,
— "
তাহলে আমি চলে যাচ্ছি!"

()

আবির চমকে তাকাল।

— "মানে?"

— "মানে, আমি আর তোমার জীবনে বোঝা হয়ে থাকতে চাই না!"

আবির হতবাক হয়ে গেল!

তিশা সত্যিই চলে যেতে চায়?

কি ভুল বুঝছে?

কিন্তু আবিরের মুখ দিয়ে তখনো কোনো শব্দ বেরোচ্ছে না।

()

তিশা ধীরে ধীরে ব্যাগ গোছানো শুরু করল।

ওর হাত কাঁপছিল, কিন্তু সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।

যে সম্পর্কের কোনো ভিত্তি নেই, যেখানে কেবল দোটানা আর সন্দেহসেখানে থাকলে লাভ কী?

তিশা দরজার দিকে হাঁটল।

ঠিক তখনই আবির ওর হাত ধরে ফেলল!

— "তুমি কোথাও যাবে না!"

তিশার চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে গেল!

— "কেন?"

আবির ধীরে ধীরে বলল,
— "
কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি, কিন্তু নিজেও সেটা বুঝতে পারিনি!"

তিশার চোখ থেকে গড়িয়ে পানি পড়ে গেল।

— "তুমি কি সত্যি সত্যি ভালোবাসো?"

আবির ওর দুটো হাত শক্ত করে ধরে বলল,
— "
হ্যাঁ! আমি এতদিন বোঝার চেষ্টা করছিলাম এটা কী অনুভূতি! কিন্তু যখন তুমি চলে যেতে চাইলেই আমার বুকের ভেতরটা হাহাকার করে উঠলতখন বুঝলাম, আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না!"

()

তিশার চোখ ভিজে গেল, কিন্তু ঠোঁটের কোণে এক টুকরো হাসি ফুটে উঠল।

আবির ওকে বুকে জড়িয়ে নিল।

সেই প্রথমবার

তিশার মনে হলো, সত্যিই এই সম্পর্কটা পেয়ে গেছে!

ভালোবাসা কখনো কখনো সময় নেয়, কিন্তু সত্যিকারের ভালোবাসা সবসময় জিতে যায়!

 

বাংলা রোমান্টিক গল্প অসম প্রেমের মায়াজাল কভার ইমেজ