ভুল ঠিকানার ভালোবাসা

ভুতুড়ে বাতি


ভুতুড়ে বাতি


কিছু রহস্য জীবনকে অন্যরকম করে তোলে। যেমন, রাহুলের জীবনে ঘটেছিল এক অদ্ভুত ঘটনা, যা আজও সে ভুলতে পারে না।


রাহুল একজন উদ্যমী তরুণ, যে শহরের অন্যতম বড় ব্যবসায়ী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিল। তার পরিবার ছিল প্রচুর টাকা-পয়সার মালিক, কিন্তু রাহুল কখনও সেই পৃথিবীর প্রতি আগ্রহ দেখায়নি। সে বরং বই, সিনেমা, আর পৃথিবীর অদ্ভুত রহস্য নিয়ে পড়াশোনা করত। কিন্তু এক রাতের ঘটনা সবকিছু পাল্টে দিল।


এটি ছিল শীতের এক অন্ধকার রাত। রাহুল তার এক বন্ধু সিদ্ধার্থের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিল একটি পুরানো চা-দোকানে। তারা একে অপরকে ভয়ঙ্কর সব গল্প শোনাচ্ছিল। সেদিন সিদ্ধার্থ তার একটি অদ্ভুত অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিল। "রাহুল, গত সপ্তাহে আমি আর আমার পরিবার এক পুরনো বাঙালি হোটেলে রাত্রি যাপন করেছিলাম। রাত ২টা নাগাদ আমি একটা অদ্ভুত বাতি দেখতে পেলাম। সেটি ঝলমল করছিল, কিন্তু যখন আমি কাছে গেলাম, সেটি নিঃশব্দ হয়ে গিয়েছিল।" সিদ্ধার্থের চোখে একটু আতঙ্ক ছিল।


রাহুল একটু হাসল এবং বলল, "তোমার দেখা জিনিসটা হয়তো তোমার কল্পনার ফল। এমন অদ্ভুত গল্প তো অনেক শোনা যায়।"


কিন্তু তার হাসি থামিয়ে দিয়ে সিদ্ধার্থ বলল, "একটা ব্যাপার জানো, আমি সেই বাতি দেখতে পেয়েছিলাম, কিন্তু যেদিন সে বাতিটি নিঃশব্দ হয়ে গিয়েছিল, আমার মনে হল, আমি যেন কোনো এক অন্য দুনিয়ায় চলে গেছি। এবং আমি জানি, ওই বাতি আমার থেকে কিছু চেয়েছিল।"


রাহুল ভাবতে শুরু করল, এটা কি সম্ভব? সিদ্ধার্থ তো ভীত। কিন্তু রহস্যের প্রতি তার আকর্ষণ এতটাই বেশি, যে সে সিদ্ধান্ত নিল, সে নিজেই সেই পুরনো হোটেলে যাবে।

ভুতুড়ে বাতি



এরপর কয়েকদিন পর রাহুল তার বন্ধুদের জানিয়ে দিল, সে পরবর্তী সপ্তাহে পুরনো হোটেলে যাবে। একরকম চ্যালেঞ্জ ছিল তার কাছে। যদি সিদ্ধার্থ কিছু দেখেছিল, তাহলে সে নিজেও দেখতে চায়। একেবারে নতুন চোখে সেই রহস্যের মোকাবিলা করবে।


প্রতিবেশী গ্রাম থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই পুরনো হোটেলটি। রাহুল গাড়িতে চেপে এক সকালে সেখানে পৌঁছাল। হোটেলটি একেবারে পুরনো, তবুও এখনও কিছুটা চকচকে দেখায়। রাহুল তার ব্যাগ নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করল।


হোটেল ম্যানেজার তাকে স্বাগত জানিয়ে বলল, "এখানে বেশ কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু আপনাদের যদি কোনো সমস্যা না হয়, তো সমস্যা নেই।" রাহুল কিছুটা অবাক হয়ে বলল, "কী ধরনের অদ্ভুত ঘটনা?"


ম্যানেজার সেদিকে ইঙ্গিত করে বলল, "এই হোটেলে কয়েকবার অদ্ভুত আলো দেখার ঘটনা ঘটেছে। বাতিটি কখনোই তেমন সঠিকভাবে কাজ করে না, এবং বিশেষ রাতগুলোতে, সেই আলো মানুষের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করে। তবে, আপনি কিছু দেখতে পাবেন কিনা জানি না।"


রাহুল মাথা নাড়িয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে একটি রুম নিয়ে চলে গেল।


রাতের খাবার খেয়ে, রাহুল হোটেলের বারান্দায় এসে দাঁড়াল। রাতের আঁধারে হোটেলটির এক অদ্ভুত সৌন্দর্য ছিল। চারপাশে কোনো শব্দ ছিল না, কেবল বাতাসের নিঃশব্দ গর্জন। রাহুল ভাবল, এই সমস্ত ভূতুড়ে গল্প শুধুমাত্র কল্পনা। কিন্তু তবুও, কিছু একটা তাকে টানছিল।


একটি সময়, সে দেখল, দূর থেকে একটা অদ্ভুত আলো ঝলমল করছে। হোটেলটি শীতল, কিন্তু সেই আলো গরম ছিল। রাহুল হাঁটা শুরু করল, বাতিটির দিকে এগিয়ে গেল। আলোর উৎস এক প্রাচীন কক্ষের কাছে পৌঁছালে, বাতিটি আরও ঝলমল করতে লাগল। রাহুল অবাক হয়ে সেই কক্ষে প্রবেশ করল।


তবে, যা সে দেখল, তা ছিল পুরোপুরি অদ্ভুত। সেই কক্ষে একটি বড় সিলিং ফ্যান ঘুরছিল, কিন্তু বাতিটি সেই ফ্যানের কাছ থেকে একেবারে বিপরীত দিকে ঝলমল করছিল। রাহুল এগিয়ে গেল, এবং বাতিটির কাছে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে বাতিটি একদম নিস্তব্ধ হয়ে গেল। তার মনে হলো, তার সামনে যেন কোনো অদৃশ্য শক্তি ছিল।

ভুতুড়ে বাতি


সে অদৃশ্য শক্তির উপস্থিতি অনুভব করতে শুরু করল। এবং ঠিক সেই মুহূর্তে, বাতির চারপাশে কিছুটা শীতল হাওয়া অনুভূত হল, যেন কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। হঠাৎ, বাতির আলো আবার জ্বলে উঠল, এবং রাহুল শুনতে পেল এক অদ্ভুত কণ্ঠ। "আমাকে মুক্তি দাও..."


রাহুল থমকে দাঁড়াল, তার চোখ বড় হয়ে গেল। সে দেখল, বাতির চারপাশে একটি পুরনো দানবীয় ছবি ভাসছে। সেই ছবির চোখ দুটি উজ্জ্বল হয়ে উঠল। রাহুল অজ্ঞান হয়ে পড়ল।


পরবর্তী সকাল, রাহুল সজ্ঞান অবস্থায় হোটেল কক্ষে ফিরে আসে। তার চোখে আতঙ্ক ছিল, সে সেই অদ্ভুত কণ্ঠ এবং ছবি ভুলতে পারছিল না।


সে হোটেল থেকে বেরিয়ে এসে সিদ্ধার্থকে ফোন দিল। "তুমি ঠিকই বলেছিলে, কিছু একটা ছিল। তবে আমি জানি না, আমি কীভাবে এটি কাটিয়ে উঠব।"


সিদ্ধার্থ কিছু না বললেও, তার শব্দে এক ধরনের মায়া ছিল। "ভয় পাও না, রাহুল। এমন অনেক কিছুই আছে যা আমরা এখনও জানি না।"


রাহুলের মনে হলো, কিছু রহস্যের সম্মুখীন হতে হলে প্রস্তুতি নিতে হয়। এবং কখনো কখনো সেই রহস্য আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়ায়