চিঠির প্রাপক
বছরের
একেবারে শেষ
বিকেল।
শীতে
কুঁকড়ে
থাকা
ঢাকার
রাস্তায় ছায়া
নামছে
ধীরে
ধীরে।
নাফিসা
আজ
বেশ
উদ্ভট
এক
কাণ্ড
করে
ফেলেছে। বাসা
পরিষ্কার করতে
গিয়ে
সে
একটা
পুরনো
চিঠির
বান্ডিল খুঁজে
পেয়েছে। চিঠিগুলো তার
নয়,
অথচ
বছর
পাঁচেক
ধরে
সেগুলো
সে
যত্ন
করে
রেখে
দিয়েছে।
প্রতিটা চিঠির
ঠিকানায় লেখা
—
“রাশেদ আহমেদ
ফ্ল্যাট-৫বি, ব্লক-ডি, মোহাম্মদপুর, ঢাকা”
কিন্তু
এই
ঠিকানায় তো
এখন
থাকে
নাফিসা নিজেই!
তবে
রাশেদ
কে?
কেন
বারবার
চিঠি
পাঠাচ্ছে কেউ,
তাও
২০১৭
সাল
থেকে
২০২০
পর্যন্ত?
কৌতূহল
চেপে
না
রাখতে
পেরে
আজ
একটা
চিঠি
খুলেই
ফেলল
সে।
কে এই মেয়ে?
চিঠির
ভাষা
ছিল
অদ্ভুত
রকমের
ব্যক্তিগত।
“রাশেদ, তুমি
এখনো
লিখো
না
কেন?
আমি
তো
প্রতিদিন অপেক্ষা করি।
তুমি
বলেছিলে, সব
ঠিক
হলে
ফিরবে।
তিন
বছর
হয়ে
গেল।
তুমি
জানো,
আমার
বাবা
তোমার
বিরুদ্ধে কী
করেছে!
কিন্তু
আমি
তো
কিছুই
করিনি...
তবুও
আমার
মনে
হয়,
তুমি
দূরে
চলে
গেছ
আমার
কাছ
থেকেই।
·
তানহা”
তানহা?
কে
এই
তানহা?
নাফিসা
ভাবছে,
এই
চিঠিগুলো তাহলে
ভুল
ঠিকানায় এসেছে?
না
কি
রাশেদ
এই
ফ্ল্যাটেই থাকতেন
একসময়?
সে
আরেকটা
চিঠি
খুলল,
এইবার
২০২০
সালের
শুরু
দিকের।
“রাশেদ, জানো?
আমি
আর
পারছি
না।
মায়ের
অসুখ,
বাবার
দম্ভ,
তোমার
নিরবতা
— সব
একসাথে
আমাকে
ভিতরে
ভিতরে
শেষ
করে
দিচ্ছে।
আমি
আজ
খুব
কাঁদলাম। তবুও
জানি
তুমি
চিঠি
খুলেও
দেখবে
না।
তবুও
লিখি...
কারণ
শুধু
এই
চিঠিগুলো জানে
আমি
এখনো
ভালোবাসি।”
নাফিসা
কেঁপে
উঠল।
ভালোবাসা — এই
একটা
শব্দের
ভেতর
কত
যন্ত্রণা জমে
আছে!
কিন্তু
আজকাল
চিঠিতে
কে
ভালোবাসা প্রকাশ
করে?
২০২০
সালে
যেখানে
সবাই
ইনবক্সে ব্লক
মারে!
একটুখানি অনুসন্ধান
নাফিসার মাথায়
প্রশ্নের পাহাড়।
সে
গুগল
করল
— “রাশেদ আহমেদ মোহাম্মদপুর”
একটা
পুরনো
ফেসবুক
প্রোফাইল পেয়ে
গেল।
ছবি
দেখে
বোঝা
গেল,
এই
ছেলেটাই হবে।
তবে
প্রোফাইল গত
৪
বছর
ধরে
ইনঅ্যাক্টিভ।
আরও
গুগল
করে
খুঁজে
পেল
একটা
নিউজ
রিপোর্ট —
“২০১৯
সালের
ডিসেম্বরে ঘটে
যাওয়া
সড়ক
দুর্ঘটনায় নিখোঁজ
এক
যুবক,
রাশেদ
আহমেদ।
এখনো
পাওয়া
যায়নি।”
নাফিসা
শিউরে
উঠল।
তাহলে...
রাশেদ
হয়তো
এই পৃথিবীতেই নেই।
আর
তানহা?
সে
কি
এখনো
অপেক্ষা করছে?
মনের অজান্তেই জড়িয়ে যাওয়া
চিঠিগুলোর ভাষা,
তানহার
অদ্ভুত
নিঃসঙ্গতা, তার
অভিমান
— সব
কিছু
নাফিসার মন
ছুঁয়ে
গেল।
সে
নিজেও
তো
এমনই।
আলাদা
থাকা,
অফিস-কাম বাসা, গ্যাপিং ফ্রেন্ডস।
কখনো
কখনো
চুপচাপ
কাঁদে,
কষ্ট
করে,
কাউকে
না
বলে।
একদিন
সাহস
করে
সে
চিঠির
খামে
থাকা
প্রেরকের ঠিকানায় একটা
চিঠি
লিখল
—
“প্রিয় তানহা,
তুমি
যাকে
চিঠি
লিখেছো,
হয়তো
তিনি
আর
এই
ঠিকানায় থাকেন
না।
আমি
জানি
না
তিনি
কোথায়,
বেঁচে
আছেন
কিনা।
তবে
আমি
প্রতিটা চিঠি
পড়েছি।
তুমি
অনেক
সুন্দর
করে
লেখো।
আমি
চিনি
না
তোমাকে,
তবুও
মনে
হয়
— তুমি
একা
নও।
কেউ
একজন
আজও
তোমার
প্রতিটা শব্দ
পড়েছে।
– এক অপরিচিত পাঠক।”
নতুন পরিচয়
দুই
সপ্তাহ
পর,
উত্তর
এল।
তানহার
হাতের
লেখা
—
“তুমি কে
আমি
জানি
না।
তবে
কেউ
আমার
চিঠিগুলো পড়েছে,
এতেই
আমি
কৃতজ্ঞ।
আমি
এখনো
রাশেদকে ভুলতে
পারিনি।
কিন্তু
তুমি
যেভাবে
আমার
লেখা
অনুভব
করেছো,
তাতে
মনে
হয়
— আমি
হয়তো
একেবারে একা
নই।
তুমি
কি
আবার
লিখবে?”
নাফিসা
হাসল।
সে
আবার
লিখল।
চিঠি
চালাচালির একমাস
পর,
একদিন
হঠাৎ
করে
ফোন
নাম্বার এল
চিঠির
ভিতরে।
তানহা
লিখেছে
—
“চিঠিতে তোমাকে
আপন
মনে
হয়।
ফোনে
যদি
একবার
কথা
বলতে
পারি...
তুমি
কি
রাজি?”
এক অপরাহ্নে দেখা
তারা
দেখা
করল।
নাফিসা
ভাবেনি,
তানহা
এতটা
শান্ত,
এতটা
কোমল
হবে।
চোখে
আজও
বিষণ্নতা, তবে
তাতে
অনন্য
একটা
সৌন্দর্য।
তানহা
বলল
—
“তুমি
জানো,
আমি
কখনো
ভাবিনি
আমার
চিঠিগুলো কেউ
পড়বে।
আমি
শুধু
নিজের
যন্ত্রণা লিখে
দিতাম
কাগজে...
ভেবেছিলাম হয়তো
একদিন
বাতাসে
মিলিয়ে
যাবে।”
নাফিসা
জিজ্ঞেস করল,
“তুমি
কি
এখনো
অপেক্ষা করো
রাশেদের জন্য?”
তানহা
কিছুক্ষণ চুপ
করে
থেকে
বলল,
“আমি
জানি
না।
কিন্তু
আমি
আজ
প্রথম
বার
কাউকে
এমন
নির্ভরতায় কথা
বলতে
পারছি...
মনে
হচ্ছে,
কেউ
বুঝতে
চায়
আমাকে।”
টুইস্ট – পরিচয় প্রকাশ
পরের
সপ্তাহে তানহা
আবার
দেখা
করতে
চাইল।
এইবার
ওর
হাতে
ছিল
এক
ফাইল
— রাশেদের মৃত্যুসনদ।
“এইটা আমি
অনেক
কষ্টে
পেয়েছি। সত্যিটা মেনে
নিতে
অনেক
সময়
লেগেছে,”
— তানহা
বলল।
নাফিসা
চুপচাপ
বসে
রইল।
তানহা
বলল
—
“কিন্তু
জানো,
তোমার
জন্য
আমি
আবার
নিজেকে
ফিরে
পাচ্ছি।
তুমি
না
থাকলে
আমি
জানতামই না,
আমার
অনুভূতি কেউ
পড়েছে,
বুঝেছে।”
নাফিসা
খুব
আস্তে
করে
বলল
—
“একটা
কথা
বলি?
আমি
আসলে...
আগে
কখনো
তোমাকে
লিখিনি। মানে...
আমি
পুরা
ঘটনাটাই খুঁজে
পেয়েছিলাম চিঠিগুলো খুলে।
কৌতূহল
থেকেই
শুরু
করি,
কিন্তু
পরে
বুঝি
— আমি
নিজের
মতো
করে
তোমার
ব্যথায়
জড়িয়ে
গেছি।”
তানহা
একটুও
রাগ
করল
না।
বরং
ওর
চোখে
অদ্ভুত
প্রশান্তি —
“তাহলে
তুমি
সত্যিই
বুঝেছো...
এটাই
তো
সবচেয়ে
বড়
কথা।
ভুল
ঠিকানায় পাঠানো
চিঠিগুলো যেন
ঠিক
মানুষের কাছেই
পৌঁছেছিল।”
শেষ দৃশ্য
আজ
দুই
বছর
পেরিয়ে
গেছে।
তানহা
আর
নাফিসা
এখন
ঘন
বন্ধু
— একে
অপরের
মতো
নিঃসঙ্গ মেয়েদের জীবন
থেকে
উঠে
এসেছে
বন্ধুত্বের, ভালোবাসার এক
নতুন
অধ্যায়।
তারা
একসাথে
একটা
ক্যাফে
চালায়
—
নাম
দিয়েছে,
"ভুল ঠিকানা"
যেখানে
দেয়ালে
ঝুলে
আছে
শত
শত
না
পাঠানো
চিঠি।
আর
লোকেরা
এসে
চিঠি
লেখে
— নিজের
না
বলা
কথাগুলো।
কারণ,
এই
ভুল
ঠিকানাই কখনো
কখনো
হয়ে
ওঠে
জীবনের
সর্বোত্তম গন্তব্য।
চিঠির শেষ নয়
নাফিসা
আর তানহার বন্ধুত্বটা এখন যেন এক
আত্মার দুই দিক।
তারা একে অপরকে এমনভাবে
বোঝে, যেন তারা একসাথে
বহু বছর ধরে পথ
চলেছে।
তাদের ছোট্ট কফি শপ “ভুল
ঠিকানা” দিনে দিনে বেশ
জনপ্রিয় হয়ে উঠছে — বিশেষ
করে তার দেয়ালে টাঙানো
হাজারো চিঠির জন্য।
প্রতিদিন
কেউ না কেউ এসে
নিজের না বলা কথা
লিখে রেখে যায়।
নাফিসা আর তানহা মাঝে
মাঝে সেই চিঠিগুলো পড়ে,
কখনো হাসে, কখনো কেঁদে ফেলে।
তানহা
এখন আগের চেয়ে অনেক
প্রাণবন্ত।
কিন্তু নাফিসা মাঝে মাঝে অনুভব
করে — তানহার চোখে এখনো একটা
শূন্যতা লুকিয়ে থাকে।
ঠিক যেন কেউ ফিরে
আসবে, অপ্রত্যাশিতভাবে...
একদিন সকালে
ক্যাফেতে
তখনো কাস্টমার ঢোকেনি।
নাফিসা কাউন্টারে বসে, তানহা দেয়ালে
নতুন কিছু চিঠি সাজাচ্ছিল।
হঠাৎ
দরজার ঘণ্টা বাজল।
একজন
যুবক ঢুকলেন।
স্মার্ট, কিন্তু চোখেমুখে ক্লান্তি আর বিষণ্নতা স্পষ্ট।
হাতের ব্যাগটা টেবিলে রেখে তিনি ধীরে
ধীরে এগিয়ে এলেন তানহার দিকে।
তিনি
বললেন,
“আমি... আমি কিছু চিঠি
খুঁজতে এসেছি।”
তানহা
বিস্মিত চোখে তাকিয়ে বলল,
“চিঠি? কেমন চিঠি?”
পুরুষটি
কাঁপা গলায় বলল,
“একসময় আমি অনেক চিঠি
লিখে পাঠাতাম।
একজন মেয়ে... তানহা নামের।
কিন্তু আমি কোনো উত্তর
পাইনি।
তখন জানতাম না, আমার পরিবারই
ওর ঠিকানাটা বদলে দিয়েছিল।
পরে শুনি... আমি হারিয়ে গেছি।
এখন ফিরে এসেছি।”
তানহার
শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল।
সে
নিঃশব্দে বলল,
“তুমি... তুমি কি রাশেদ?”
ফিরে আসা, না ফিরে আসা?
ছেলেটি
মাথা নিচু করে বলল,
“হ্যাঁ। আমি বেঁচে গিয়েছিলাম।
দুর্ঘটনার পর হাসপাতালে ছিলাম,
নাম ঠিকানা মনে ছিল না।
স্মৃতিশক্তি আসতে সময় লেগেছে।
ফিরে এসে দেখি, তুমি
নেই।
ঠিকানা খুঁজতে খুঁজতে এই ‘ভুল ঠিকানা’
পেলাম।”
তানহার
চোখে অশ্রু।
সে যেন বিশ্বাস করতে
পারছে না।
আর
নাফিসা?
সে হতবাক।
এই তো, যার কথা
চিঠিতে পড়েছে শতবার, যাকে মৃত ভাবা
হয়েছিল — সে এখন সামনে
দাঁড়িয়ে!
এক চরম দ্বন্দ্ব
রাশেদ
বলল,
“তুমি কি এখনো আমার
জন্য অপেক্ষা করো?”
তানহা
চুপচাপ তাকিয়ে রইল।
এই
সময়টা সে চেয়েছিল একসময়।
রাশেদের ফিরে আসা, ক্ষমা
চাওয়া, সবকিছু ঠিক হয়ে যাওয়া।
কিন্তু
এখন তার ভিতরে কেমন
যেন দ্বিধা।
এত
বছর পেরিয়ে গেছে, আর এখন সে
একা নয় —
নাফিসা আছে।
তার একটুও মনে হয় না,
সে একা।
তানহা
বলল,
“তুমি যে হারিয়ে গিয়েছিলে,
সেটা তোমার দোষ নয়।
কিন্তু আমি একা থাকতে
থাকতে বদলে গেছি।
এখন আমার পৃথিবী অন্যরকম।”
টুইস্ট – ভালোবাসার বিভ্রান্তি
রাশেদ
পরদিন আবার দেখা করতে
এলো।
তানহা
কিছু বলার আগেই সে
বলল,
“তুমি এখনো কনফিউজড, আমি
জানি।
কিন্তু আমি বিশ্বাস করি,
আমরা দু’জনই একে
অপরকে ভুলিনি।
এত বছর পরও, আমি
যখন তোমার নাম শুনি, বুক
ধড়ফড় করে।”
তানহা
কিছু বলতে পারল না।
সে
জানে, রাশেদকে ভালোবেসেছিল।
তবু, তার মন যেন
এখন অন্য কোনো অনুভবের
দিকে ঝুঁকে পড়েছে।
সে
নাফিসার দিকে তাকায় বারবার।
নাফিসা একা চা বানাচ্ছে,
কাউন্টার গোছাচ্ছে — স্বাভাবিকভাবে, কিন্তু মুখে হালকা বিষণ্নতা।
তানহার
হৃদয়ে হঠাৎ একটা কথাই
আসে —
“আমি
কি
নাফিসাকে
ভালোবেসে
ফেলেছি?”
বন্ধুত্ব না ভালোবাসা?
রাতের
দিকে তানহা আর নাফিসার মধ্যে
অদ্ভুত নীরবতা।
নাফিসা
ধীরে বলল,
“তুমি যদি রাশেদের সঙ্গে
থেকে সুখী হও, আমি
কিছু বলবো না।
সে তোমার অতীত, আমি না... আমি
তো স্রেফ একটা পথ।”
তানহা
একটু রেগে গেল।
“তুমি
‘পথ’ না, তুমি জীবন হয়ে গেছো আমার
জন্য!”
নাফিসা
চুপ করে রইল।
এই
প্রথমবার তাদের সম্পর্কের গভীরতা প্রকাশ পেল।
কিন্তু এই সম্পর্ক কি
শুধুই বন্ধুত্ব?
নাকি
ভুল ঠিকানার চিঠিগুলোর ভেতর গড়ে ওঠা
নতুন
এক
ভালোবাসা?
সিদ্ধান্তের সময়
তানহা
পরদিন রাশেদের সঙ্গে দেখা করল।
সে
বলল —
“তুমি ফিরে এসেছো, এটা
ঈশ্বরের আশীর্বাদ।
তবে আমি সেই মানুষটি
নেই, যাকে তুমি ছেড়ে
গিয়েছিলে।
তোমার জন্য আমার ভেতরে
একরকম ভালোবাসা আছে, কিন্তু এখন
যে ভালোবাসা আমার জীবন জুড়ে,
সেটা অন্য এক মানুষের
জন্য।”
রাশেদ
চুপ করে রইল।
সে বুঝল — সে দেরি করে
ফেলেছে।
এক নতুন শুরু
ক্যাফেতে
নতুন করে লেখা হলো
এক চিঠি —
“ভুল
ঠিকানা বলেই তো, চিঠিটা
ঠিক মানুষের কাছে পৌঁছায়।
তানহা আর নাফিসা আজ
একটা গল্প।
ভালোবাসার গল্প, যা জন্ম নিয়েছিল
ভুলে, কিন্তু শেষ হলো ঠিক
ঠিকানায়।”
ধাক্কা খাওয়া শুরু
নাফিসা
আর তানহা এখন অফিশিয়ালি কিছু
নয়।
তারা কেউ কাউকে প্রেমিকা
বলার সাহস পায় না।
তবে একে অপরকে ছাড়া
আর ভাবতেও পারে না।
তাদের
মধ্যে যে বন্ধন তৈরি
হয়েছে, সেটা নীরব —
কিন্তু এতটাই গভীর যে কেউ
আলাদা করার চেষ্টা করলেই
ভেঙে যাবে নয়, বরং
আরও শক্ত হয়ে উঠবে।
কিন্তু
কফিশপে যারা নতুন আসতে
শুরু করেছে, তাদের কেউ কেউ প্রশ্ন
তুলছে।
“আপনারা
কি বোন?”
“আপনারা
একসাথে থাকেন?”
“ওর
স্বামী কোথায়?”
প্রথমদিকে
তারা এড়িয়ে যেত।
কিন্তু
একটা ঘটনা তাদের ভিতরে
আগুন লাগিয়ে দিল।
এক মা’র আগমন
একদিন
এক নারী কফিশপে এসে
খুব খারাপ ব্যবহার করলেন।
তিনি
বললেন,
“তানহা? তুই এখানে? তুই
এখন এই মেয়ের সাথে
থাকিস?
তুই কি নিজেকে ভুলে
গেছিস?”
তানহার
মুখ ফ্যাকাশে।
এই মহিলা তার মা।
মা
চিৎকার করে বললেন,
“এইভাবে চললে তোরা দুজনেই
নরকে যাবি!
মানুষ কি বলবে? তুই
কি এখন এসব সম্পর্কে
জড়িয়েছিস?”
নাফিসা
মুখ নিচু করে বসে
রইল।
তানহা
দাঁড়িয়ে বলল,
“মা, তুমি যদি ভালোবাসা
বুঝতে না পারো, তাহলে
ঘৃণা দিয়েও বোঝার চেষ্টা করো না।
তুমি যখন রাশেদের বিরুদ্ধে
ছিলে, তখন আমি লড়েছি
তোমার জন্য।
এখন আমি কাউকে হারাতে
চাই না, যাকে ভালোবাসি।”
মা
হুমকি দিলেন —
“তুই যদি ওর সঙ্গে
থাকিস, তবে এই ঘরের
মেয়ে হিসেবে তোর পরিচয় থাকবে
না।”
নাফিসার ভাঙন
ঘটনার
পরদিন, নাফিসা দূরে সরে যেতে
শুরু করল।
সে
আর তানহার চোখে চোখ রাখে
না, আগের মতো গল্প
করে না।
একদিন
সে বলল,
“তুই কি জানিস, সমাজ
কী ভাবছে?
আমাদের নিয়ে গুজব, পোস্ট,
ট্রল... আমার ছোট ভাই
পর্যন্ত শুনেছে।
আমি কি তোকে কষ্ট
দিতে চাচ্ছি? না, কিন্তু আমি
নিজের জীবনেও ক্লান্ত।”
তানহা
শান্তভাবে বলল,
“তুই কি তাহলে ভয়
পাস?
ভালোবাসা যদি সত্যি হয়,
তাহলে সে তো ভয়
পায় না।”
নাফিসা
বলল,
“ভালোবাসা শুধু দু’জনের
হলে হতো, কিন্তু আমরা
তো সমাজে বাঁচি।
তুই শক্ত, তুই লড়তে পারিস।
আমি পারি না... আমি
সবসময় পালিয়ে যাই।”
এক অজানা চিঠি
ঠিক
এই টানাপোড়েনের সময়, এক অচেনা
চিঠি এসে পৌঁছায় কফিশপে।
চিঠিতে
লেখা —
“আমি
তানহার পুরনো প্রতিবেশী।
জানি সে কতো কষ্ট
পেয়েছে।
জানি সে কতোটা লড়েছে।
কিন্তু জানো? ও এখন যেমন
আছে, সেটাই ওর সত্যিকারের চেহারা।
আমি
ওকে আরেকবার সুখী দেখতে চাই।
আর ও যদি এখন
সুখী হয়, তাহলে তা
যেভাবেই হোক, আমি পাশে
থাকব।
– রাশেদ।”
চিঠিটা
পড়ার পর নাফিসার বুক
কেঁপে উঠল।
রাশেদ
স্বেচ্ছায় বিদায় জানালো।
ভালোবাসার প্রকৃত অর্থ বুঝে — নিজে
সরে
দাঁড়ালো।
ফিরে আসা
তানহা
জানত না রাশেদ এই
চিঠি লিখবে।
সে
এখন কাঁদছে, কিন্তু তার কান্নায় এখন
আর হতাশা নেই — আছে প্রশান্তি।
নাফিসা
এসে তার পাশে বসে
বলল,
“তুই যদি আমায় আবার
হাত ধরতে বলিস, আমি
ধরব।
এবার আমি পালাবো না।”
তানহা
হাসল।
“আমি চেয়েছিলাম তুই একবার সত্যি
বুঝিস — ভালোবাসা মানে শুধু রোমান্স
না, বরং যার জন্য
সব হারাতে রাজি থাকা।”
কফিশপে নতুন নিয়ম
“ভুল
ঠিকানা” এখন আর শুধু
চিঠির কফিশপ না —
এটা ভালোবাসার
আশ্রয়স্থল
হয়ে গেছে।
তারা
দেয়ালে একটা নতুন নোটিশ
টানায় —
“ভালোবাসা
ঠিকানায় পৌঁছাতে ভুল করে না।
যারা আমাদের নিয়ে প্রশ্ন তুলতে
চান, তারা আমন্ত্রণ পাবেন
আমাদের গল্প শুনতে।
আর যারা বুঝতে চান
— আসুন, একটা চিঠি লিখুন
নিজের হৃদয়ের ঠিকানায়।”
শেষ টুইস্ট – হঠাৎ দেখা
সপ্তাহখানেক
পর, এক অদ্ভুত অতিথি
আসে।
একটা
হুইলচেয়ারে বসা এক বয়স্ক
মহিলা।
চোখেমুখে অনুশোচনা।
তানহা
দেখে চমকে ওঠে।
সে
বলল,
“মা?”
মা
কাঁপা গলায় বললেন,
“আমি কিছু ভুল বুঝেছিলাম।
ভালোবাসা যদি শান্তি দেয়,
সেটা পাপ হতে পারে
না।
তুই যা ভালোবাসিস, তুই
যা হোস — আমি সেটাই দেখতে
চাই।
আজ আমি গর্বিত মা
হতে চাই।”
তানহা
কেঁদে ফেলে।
আর
নাফিসা প্রথমবার মাকে সালাম করে
বলে,
“আমারও একটা মা হোক
আজ থেকে।”