ভুল ঠিকানার ভালোবাসা

অব্যক্ত বন্ধন

 
অব্যক্ত বন্ধন

প্রথম অংশ

ছোট শহর মেঘপুরে থাকত অদ্রি। এক সাধারণ মেয়ে, যার চোখে ছিল বড় স্বপ্ন আর মনে ছিল এক অজানা ব্যাকুলতা। বই পড়া ছিল তার প্রিয় শখ, আর মাঝে মাঝে নিজের লেখা কবিতা ডায়েরিতে লিখত। অদ্রি ভাবত, তার জীবন একঘেয়ে হলেও তার কল্পনায় সবসময় এক রঙিন পৃথিবী থাকে।  


কলেজে ভর্তি হওয়ার পর অদ্রির জীবন কিছুটা বদলে গেল। নতুন পরিবেশ, নতুন বন্ধু। ক্লাসের প্রথম দিনেই তার দেখা হয় অনিরুদ্ধের সঙ্গে। অনিরুদ্ধ ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বভাবের। হাসিখুশি, প্রাণোচ্ছল, এবং সবার মধ্যমণি।  


অদ্রি সবার মাঝে একদম নীরব থাকত, আর অনিরুদ্ধ ছিল ঠিক তার বিপরীত। একদিন ক্লাসের ব্রেকের সময় অনিরুদ্ধ এসে অদ্রিকে জিজ্ঞেস করল, **“তুমি এত চুপচাপ কেন?”**  


অদ্রি হেসে বলল, “এটাই আমার স্বভাব।”  


এরপর থেকে অনিরুদ্ধ আর অদ্রির মধ্যে কথাবার্তা শুরু হল। ধীরে ধীরে তাদের বন্ধুত্ব গভীর হতে লাগল।  


অনিরুদ্ধ ছিল অদ্রির জীবনের প্রথম বন্ধু, যে তাকে সত্যিই বুঝত। অদ্রি যখন তার ডায়েরি থেকে কবিতা পড়ত, অনিরুদ্ধ মুগ্ধ হয়ে শুনত।  


একদিন সন্ধ্যায়, কলেজের মাঠে বসে অনিরুদ্ধ বলল, “অদ্রি, জানো? তোমার মতো কাউকে আমি আগে দেখিনি। তোমার সৃজনশীলতা অসাধারণ।”  


অদ্রির মুখে হাসি ফুটে উঠল। কিন্তু সেই হাসির আড়ালে ছিল এক অজানা অনুভূতি—যা সে তখনও নিজের কাছে স্বীকার করেনি।  


অব্যক্ত বন্ধন


গভীরতা এবং দূরত্ব 


সময়ের সঙ্গে তাদের বন্ধুত্ব আরও গভীর হল। তারা প্রায়ই একসঙ্গে সময় কাটাত। অনিরুদ্ধের প্রিয় অভ্যাস ছিল অদ্রির লেখা কবিতাগুলো পড়া।  


একদিন, অনিরুদ্ধ হঠাৎ বলল, “অদ্রি, আমার স্বপ্ন হল একজন সংগীতশিল্পী হওয়া। কিন্তু আমার পরিবার এ স্বপ্ন মেনে নেয় না।”  


অদ্রি তাকে সাহস দিল, “যদি তুমি সত্যিই এটা চাও, তবে তোমার স্বপ্ন পূরণের জন্য লড়াই করতে হবে। আমি তোমার পাশে থাকব।” 


অনিরুদ্ধ অদ্রির এই কথায় অনুপ্রাণিত হল। কিন্তু সে জানত না, অদ্রির মনে তখন কী চলছে।  


অদ্রি ধীরে ধীরে বুঝতে পারল, সে অনিরুদ্ধকে ভালোবেসে ফেলেছে। কিন্তু ভয় পেত, এই ভালোবাসা বন্ধুত্ব নষ্ট করবে। তাই সে তার অনুভূতি লুকিয়ে রাখল।  


কিছুদিন পর, অনিরুদ্ধ জানাল যে সে ঢাকায় চলে যাবে তার সংগীতের স্বপ্ন পূরণের জন্য। এই কথা শুনে অদ্রির মন ভেঙে গেল, কিন্তু সে কিছু বলল না।  


শেষ দিনের সন্ধ্যায়, অনিরুদ্ধ বলল, “তুমি জানো, অদ্রি, তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে ভালো বন্ধু। আমি তোমার কথা কখনো ভুলব না।”  

অদ্রি মনে মনে বলল, "তুমি শুধু বন্ধু নও, তুমি আমার সবকিছু। কিন্তু এ সত্য আমি কখনোই তোমার কাছে প্রকাশ করব না।"


অনিরুদ্ধ চলে গেল। অদ্রি নিজের একাকীত্বে ডুবে গেল। তার ডায়েরি ভরে উঠল দুঃখমাখা কবিতায়।  


---

অব্যক্ত বন্ধন


 ভালোবাসার শূন্যতা


অনিরুদ্ধ চলে যাওয়ার পর অদ্রি তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করত। কিন্তু ধীরে ধীরে তাদের কথাবার্তা কমে গেল। অনিরুদ্ধ ব্যস্ত হয়ে পড়ল তার ক্যারিয়ারে।  


একদিন, অদ্রি অনলাইনে জানতে পারল যে অনিরুদ্ধ একটি গানের প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়েছে। সে খুশি হল, কিন্তু তার মন যেন আরও ভারী হয়ে গেল।  


অনেক বছর পর, একদিন অনিরুদ্ধ হঠাৎ অদ্রির সঙ্গে যোগাযোগ করল।  


সে বলল, **“অদ্রি, আমি তোমার শহরে আসছি। দেখা হবে?”**  


অদ্রি অপেক্ষায় ছিল এই দিনের জন্য। তারা এক ক্যাফেতে দেখা করল।  


অনিরুদ্ধ আগের মতোই ছিল—হাসিখুশি আর প্রাণবন্ত। কিন্তু তার জীবনে অনেক কিছু বদলে গেছে। সে এখন একজন প্রতিষ্ঠিত সংগীতশিল্পী।  


কথার মাঝখানে অনিরুদ্ধ বলল, **“অদ্রি, আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ। তুমি যদি আমাকে উৎসাহ না দিতে, তবে আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারতাম না।”

অব্যক্ত বন্ধন


অদ্রি শুধু হেসে বলল, **“তুমি নিজের শক্তিতেই সফল হয়েছ। আমি শুধু তোমার পাশে ছিলাম।”**  


কিছুক্ষণ পর অনিরুদ্ধ বলল, **“তোমার জন্য একটা খবর আছে। আমি বিয়ে করছি।”**  


অদ্রির হাসি জমে গেল। তার হাত কাঁপতে শুরু করল, কিন্তু সে নিজেকে সামলে নিল।  


সে বলল, "অভিনন্দন, অনিরুদ্ধ! তোমার আনন্দেই আমার আনন্দ।


সেদিন রাতে, অদ্রি ডায়েরিতে লিখল, **“ভালোবাসা মানে কারও পাশে থাকা, তাকে সুখী দেখতে চাওয়া। কিন্তু সব ভালোবাসা প্রাপ্তি হয় না। কিছু ভালোবাসা হয় একতরফা। তবুও এই ভালোবাসা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া।”**  


অনিরুদ্ধ তার জীবনে এগিয়ে গেল। অদ্রি একা রইল, কিন্তু তার হৃদয়ে রইল এক শুদ্ধ ভালোবাসার গল্প।