ভুল ঠিকানার ভালোবাসা

প্রেয়সী

  

প্রেয়সী

ঘড়ির কাঁটা তখন রাত দুটো ছুঁই ছুঁই। ফারাবি দরজা খুলে এক পা বাড়াতেই ধাক্কা খায় কারো সঙ্গে। চোখ তুলে দেখে, ফারহান। শার্টের বোতাম খোলা, চুল এলোমেলো, মুখে এক অদ্ভুত অস্থিরতা।  

"তুমি? এত রাতে?" ফারাবি বিস্মিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে। 

"ভেতরে কথা বলব," কণ্ঠে গম্ভীর সুর।  

ফারাবি অবাক হয়ে বলে, "এভাবে হুট করে চলে আসা উচিত হয়নি। কেউ দেখে ফেললে..."  

ফারহান পাত্তা দেয় না। তাকে এক পাশে ঠেলে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। ভেতরের নিস্তব্ধতা আর ফারহানের অস্বাভাবিক আচরণ ফারাবিকে আরও অস্থির করে তোলে। 

"তুমি এমন করছ কেন? কী হয়েছে?" ফারাবি শীতল কণ্ঠে বলে। 

ফারহান ফারাবির দিকে তাকায়। চোখে লালচে আভা। হয়তো মদ্যপ। কিন্তু চাহনিতে কিছু একটা অদ্ভুত ছিল—দম বন্ধ করা এক রকমের আকাঙ্ক্ষা।  

"তোর কাছে একটা জিনিস চাওয়া বাকি ছিল, তাই এসেছি।"  

"এত রাতে? কী জিনিস?"  

"তোর সময়।"  

ফারাবি হতবাক। "এত রাত করে এখানে এসে এসব বলার মানে কী? প্লিজ যাও।"  

ফারহান ফারাবির সামনে এসে দাঁড়ায়। খুব কাছে। এতটা কাছে যে মেয়েটি পেছনের দেয়ালে ঠেকে যায়। ধীরে ধীরে বলে, "তুই জানিস না তোর কাছাকাছি আসলে আমি কেমন পাগল হয়ে যাই। তাই নিজেকে আর আটকে রাখতে পারি না।"  

ফারাবি গলার স্বর শক্ত করার চেষ্টা করে। "তুমি মদ খেয়ে এসেছ, তাই না? প্লিজ, বের হও এখান থেকে। আমি চিৎকার করব!"  

"চিৎকার কর। আমি দেখতে চাই কে আসে তোকে বাঁচাতে।"  

ফারাবি ধাক্কা দিয়ে ফারহানের কাছ থেকে দূরে সরে আসে। তার সারা শরীর কাঁপছে। হাত দিয়ে দেয়ালের কাছে সাপোর্ট নেয়। ফারহান আবার এগিয়ে আসে। এইবার কণ্ঠে আর রাগ নেই, শুধু এক ধরনের আক্ষেপ।  

"তোর কেন ভয় লাগে এত? আমি কি এতটা খারাপ?"  

"তুমি খারাপ নও, কিন্তু তুমি যা করছ তা ঠিক নয়। আমি তোমাকে এরকম কখনো ভাবিনি। প্লিজ, চলে যাও।"  

ফারহান কিছুক্ষণ চুপ থাকে। তারপর হঠাৎ জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। চাঁদের আলো তার মুখে পড়ে। সে গভীর শ্বাস নেয়। যেন নিজের ভেতরের দহনটাকে সামলানোর চেষ্টা করছে।  

"ঠিক আছে, চলে যাচ্ছি। কিন্তু মনে রাখিস, তুইই আমাকে এমন করেছিস। তোর চোখ, তোর মুখ, তোর এই চুপ থাকা—সব কিছুর জন্য তুই দায়ী।"  

ফারাবি হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। ফারহান দরজা খুলে বেরিয়ে যায়। কিন্তু তার উপস্থিতি যেন ঘরটায় এখনো রয়ে গেছে। ফারাবি নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে, কিন্তু ভেতরের এক অজানা অনুভূতি তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়।  

প্রেয়সী

ফারাবি জানালার কাছে এসে দাঁড়ায়। ফারহান চলে গেছে, কিন্তু তার উপস্থিতি যেন ঘরের দেয়ালেও আঁচড় কেটে গেছে। মেয়েটি কিছুতেই স্থির হতে পারছে না। নিজের হাত দুটো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ভাবছে, ফারহান কেন এমন করল?  

বুকের ভেতর যেন ভয় আর অপরাধবোধ মিলে একটা দমবন্ধ করা অনুভূতি তৈরি করেছে। নিজেকে সান্ত্বনা দিতে চেয়েও পারছে না। হঠাৎ পাশের ঘর থেকে হালকা শব্দ আসে। কেউ উঠে গেছে কি?  

ফারাবি আতঙ্কিত হয়ে দরজার দিকে তাকায়। সবার ঘুম ভেঙে গেলে কী হবে? ভীষণ ভয়ে পা টিপে টিপে গিয়ে দরজাটা একটু ফাঁক করে দেখে। বাইরে সব শান্ত। তবে ভেতর থেকে আতঙ্ক কাটছে না। ফারহান কি সত্যিই চলে গেছে? নাকি আবার ফিরে আসবে?  

ফারাবি জানালার দিকে তাকায়। বাইরে অন্ধকার, দূরে গাছগুলো হালকা বাতাসে দুলছে। চাঁদের আলো সবকিছু নীরব করে রেখেছে। তার কাঁধে হঠাৎ ভারি একটা হাতের অনুভূতি হয়। চমকে ঘুরে দেখে—কেউ নেই। 

নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে ফারাবি। ‘এটা কেবল ভয়,’ মনে মনে নিজেকে বোঝায়। কিন্তু তার ভেতর একটা অদ্ভুত টান, একটা চাপা আকাঙ্ক্ষা জন্মাচ্ছে। ফারহান কেন এমনটা বলে গেল? কেন এমন চাহনি নিয়ে তাকাল?  

তবু সে নিজের মনকে সামলে নেয়। ফারহান এখন তার জন্য শুধুই বিপদ। আর কিছু নয়। কিন্তু সেই বিপদের মধ্যেও কোথাও একটুখানি মায়া, একটুখানি অপরিচিত ভালোবাসার স্পর্শ লুকিয়ে আছে।  

নিজের শ্বাসকে শান্ত করার চেষ্টা করে বিছানায় গিয়ে শোয়। ফারাবি বুঝতে পারে, রাতটা সহজে কাটবে না।  

---  

অন্যদিকে, ফারহান রাস্তায় দাঁড়িয়ে। মৃদু বাতাস চুল উড়িয়ে দিচ্ছে। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। কয়েক পেগ মদ তাকে বেসামাল করেছিল, কিন্তু ফারাবিকে দেখে সব যেন জ্বলে-পুড়ে একাকার হয়ে গেছে।  

"তুই আমাকে এভাবে কেন পাগল করিস, ফারাবি?" নিজের মনেই বলে ওঠে সে।  

তার মনে পড়ে দেড় বছর আগের সেই ঘটনা। ফারাবির চোখে যে ভয় আর ঘৃণা তখন দেখেছিল, তা আজও ভুলতে পারেনি। আর আজ, এতটা সময় পরও, তার প্রতি নিজের টানটা কেন কমছে না? বরং যেন আরও গভীর হচ্ছে।  

একটা মুহূর্ত আসে, যখন সে মনে করে, আবার ফিরে যাবে। দরজায় কড়া নাড়বে। কিন্তু তার নিজের মনই তাকে থামিয়ে দেয়।  

"তুই আমার জন্য নয়," নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে ফারহান। "তুই ভালো থাক, দূরে থাক।"  

রাত ক্রমশ গভীর হয়। দুজন দুই জায়গায় নিজেদের ভেতরকার যুদ্ধে হেরে যায়। 

ফারাবি সারারাত চোখের পাতা এক করতে পারেনি। ফারহানের সেই চাহনি, কথাগুলো, আর তার আচরণ বারবার মনের ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছে। ভোরের আলো ফোটার আগেই সে উঠে পড়ল। নিজের ভেতরের অস্থিরতা থেকে মুক্তি পেতে জানালার পাশের চেয়ারে গিয়ে বসল। ঠান্ডা বাতাস গায়ে লাগলেও মাথার গরম ভাবটা কমছে না।  

কেন এসেছিল সে?" ফারাবি নিজেকেই প্রশ্ন করে।  

ততক্ষণে সূর্য ওঠার ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে। এক কাপ চা বানিয়ে ফারাবি বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। কিন্তু শান্তির বদলে মাথায় আরও চিন্তার ভিড় জমতে থাকে।  

প্রেয়সী

একসময় ঘরের দরজায় শব্দ হয়। ফারাবি চমকে উঠে। এই সকালবেলায় কে এলো? দরজার দিকে এগিয়ে যায় সে। খুলতেই রিফাত ভাইয়া। 

"কী অবস্থা, আপু? ঘুম হয়নি দেখছি," রিফাত বলে।  

"না। একটু মাথাব্যথা ছিল," ফারাবি অস্বস্তি নিয়ে বলে।  

"তোমার মাথাব্যথা, নাকি রাতে কেউ এসেছিল?" রিফাতের গলায় কৌতূহল।  

ফারাবি চমকে যায়। "তুমি এসব কী বলছ, ভাইয়া?"  

রিফাত হাসে। "আমার কাছ থেকে কিছু লুকিও না। দরজায় দাগ আছে। তাছাড়া, ফারহানকে ভোরবেলায় দেখেছি এই রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে।"  

ফারাবি চুপ হয়ে যায়। তার মনে হচ্ছে, মাটির নিচে লুকিয়ে যেতে পারলে ভালো হতো।  

"আচ্ছা, তোমাকে কিচ্ছু বলব না। শুধু এটুকু বুঝে নাও, ফারহানকে নিয়ে খেলতে যেও না। ছেলেটা তার মতো থাকুক। ওর সঙ্গে জড়িয়ে পড়া মানে নিজের বিপদ ডেকে আনা," রিফাত বলে চলে।  

কথাগুলো যেন ছুরির মতো বিঁধে যায় ফারাবির হৃদয়ে। সে জানে, রিফাত ঠিকই বলছে। কিন্তু কেন যেন সে নিজেকে আটকাতে পারছে না। ফারহানের প্রতি এই অদ্ভুত অনুভূতিটা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে, কিছুই বুঝতে পারছে না।  

---  

অন্যদিকে, ফারহান পুরো দিনটা কাটিয়েছে নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু রাতে, যখন চারপাশ নীরব হয়, তখনই তার অস্থিরতা বেড়ে যায়। ফারাবির ভয় পাওয়া মুখ আর কাঁপতে থাকা ঠোঁট তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে।  

সে বিছানায় শুয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে ভাবে, "তুই কেন আমাকে এভাবে অস্থির করে রাখিস, ফারাবি?"  

তবে সে নিজেকে কথা দেয়, আর কখনোই ফারাবির সামনে যাবে না। নিজেকে এই যন্ত্রণার হাত থেকে মুক্তি দেবে।  

কিন্তু সত্যি কি সে পারবে?  

ফারাবি সারাদিন মনের ভেতর অস্থিরতা নিয়ে ঘোরে। রিফাত ভাইয়ার সঙ্গে কথা বলবে বলেও সাহস করতে পারে না। ও জানে, রিফাত শুনলে আরও রেগে যাবে।  

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। ফারাবি জানালার পর্দার আড়াল থেকে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে। মাথায় শুধু একটাই চিন্তা—ফারহান আসবে কি না।  

ঠিক তখনই দরজায় টোকা পড়ে।  

ফারাবি চমকে উঠে। বুকটা ধকধক করছে। টোকাটা আরও জোরে হয়। ভেতর থেকে রিফাতের গলা শোনা যায়।  

"ফারাবি, দরজা খুলে দাও।"  

একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে ফারাবি দরজা খুলে দেয়। রিফাত ভেতরে ঢুকেই বলে, "তোমার মুখ দেখে মনে হচ্ছে, কোনো বড় ঝামেলায় আছ। কী হয়েছে?"  

ফারাবি কিছুক্ষণ চুপ থাকে। তারপর কাঁপা কণ্ঠে বলে, "ফারহান আমাকে মেসেজ করেছে। সে বলেছে, আজ সন্ধ্যায় দেখা করতে চায়।"  

রিফাতের চোখ কপালে উঠে যায়। "কী বললে! সে এখনো তোর পেছনে?"  

ফারাবি মাথা নিচু করে থাকে।  

রিফাত গম্ভীর গলায় বলে, "আমি বাইরে যাচ্ছি। যদি ও আসে, ওকে ভালোভাবে বুঝিয়ে দেব। আর তুই দরজা বন্ধ করে ভেতরে থাকবি।"  

প্রেয়সী

অন্যদিকে ফারহান রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে সময় দেখছে। ওর মাথায় একটাই চিন্তা—ফারাবি কি দেখা করতে আসবে?  

মনে মনে সে নিজেকে বলে, "যদি না আসে, তবে আমি নিজেই ওর বাসায় যাব। আর লুকিয়ে থাকার কোনো দরকার নেই।"  

ঠিক তখনই পেছন থেকে একটা চিৎকার।  

"ফারহান!"  

ফারহান ঘুরে তাকায়। রিফাত। তার চোখে আগুন।  

"তোর সাহস হলো কীভাবে? তুই কেন আবার ফারাবির জীবনে আসার চেষ্টা করছিস?"  

ফারহান ঠান্ডা গলায় বলে, "ও আমার। ওকে ছাড়া আমি থাকতে পারব না।"  

রিফাত আরও রেগে যায়। "ও তোর কিছুই না। তুই এখান থেকে দূরে চলে যা। আর যদি কোনোদিন ওর কাছে আসার চেষ্টা করিস, আমি তোকে দেখে নেব।"  

ফারহান এক পা এগিয়ে আসে। তার গলায় স্থিরতা। "তুই যা বলিস বল। কিন্তু ফারাবি আমার। ও যদি আমাকে প্রত্যাখ্যান করেও, আমি ওর জন্য অপেক্ষা করব।"  

রিফাত ঘুরে চলে যায়। তার চোখেমুখে হতাশা।   

ফারাবি জানালার পাশ থেকে এই দৃশ্য দেখে। ও বুঝতে পারে, ঝড় কেটে যায়নি। বরং আরও বড় কিছু হতে চলেছে।  

রাত গভীর হয়ে এসেছে। রিফাত তার ঘরে গিয়ে বসে আছে। মুখে অদ্ভুত রাগ আর হতাশার ছাপ। অন্যদিকে, ফারাবি জানালার ধারে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ ফোন বেজে ওঠে। অচেনা নাম্বার।  

ফারাবি কিছুক্ষণ দেখে, তারপর ফোন ধরে। ওপাশ থেকে ফারহানের কণ্ঠ ভেসে আসে।  

"তোর ভাই আমাকে যা খুশি বলুক, আমি পাত্তা দিই না। তুই কি সত্যিই আমাকে দেখতেই চাস না?"  

ফারাবি কাঁপা কণ্ঠে উত্তর দেয়, "তুমি প্লিজ এসব বন্ধ করো। আমি আর তোমার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক চাই না।"  

ফারহান চুপ হয়ে যায়। তারপর খুব ধীর গলায় বলে, "তোকে এভাবে ছেড়ে যেতে পারব না। তুই আমার সবকিছু। আমি চাই তুই আমার কাছে ফিরে আসিস।"  

ফারাবি কোনো উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেয়। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে।  

---  

অন্যদিকে, ফারহান রাস্তায় বসে আছে। ফোনটা শক্ত করে ধরে। তার ভেতর একটা আগুন জ্বলছে।  

মনে মনে বলে, "ফারাবি, তুই না চাইলেও আমি তোকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারব না। তুই যদি আমার না হস, তাহলে কারোও না হবি।"    

পরদিন সকালে, ফারাবি ঠিক করল রিফাতকে সবকিছু খুলে বলবে। ভাইয়ার সাহায্য ছাড়া এ সমস্যা থেকে মুক্তি সম্ভব নয়।  

রিফাত নাস্তা করতে করতে বলে, "কী নিয়ে এত চিন্তিত তুই?"  

ফারাবি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে, "ভাইয়া, ফারহান থামছে না। আমাকে মেসেজ করছে, ফোন দিচ্ছে। কাল রাতেও কথা বলল।"  

প্রেয়সী

রিফাত থেমে যায়। তারপর বলে, "তুই চিন্তা করিস না। আমি দেখছি। তুই শুধু ওর মেসেজ বা কলের কোনো রিপ্লাই দিস না।"  

ফারাবি মাথা নাড়ল।  

---  

দিনগুলো ধীরে ধীরে পার হতে থাকে। ফারাবি যতই এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে, ফারহান ততই তার দিকে এগিয়ে আসে। এক সন্ধ্যায়, বাড়ি ফেরার পথে ফারাবি হঠাৎ বুঝতে পারে, কেউ তার পেছনে আসছে।  

সে দ্রুত হাঁটতে থাকে। কিন্তু পায়ের শব্দ আরও কাছে চলে আসে। হঠাৎ পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে, ফারহান।  

"তুই আমায় এড়াতে পারবি না, ফারাবি," ফারহান বলে।  

"তুমি কেন এমন করছো? আমার জীবনটা নষ্ট করতে চাও?"  

ফারহান তার দিকে এগিয়ে এসে বলে, "তুই আমার ছিলি, আছিস, আর থাকবি।"  

ফারাবি পেছনে সরে গিয়ে বলে, "তুমি ভুল করছো, ফারহান। প্লিজ, আর কোনো ঝামেলা করো না।"  

কিন্তু ফারহানের চোখে একটা অদ্ভুত দৃঢ়তা। সে বলে, "ঝামেলা তখনই শেষ হবে, যখন তুই আমার জীবনে ফিরে আসবি।"  

ফারাবি পেছনে সরতে সরতে দেয়ালের সঙ্গে ঠেকে যায়। ফারহানের চোখে ভয়ংকর এক জেদ, যেন সে হারতে রাজি নয়।  

"তুমি আমাকে এভাবে আটকে রাখতে পারো না। আমি তোমার কেউ নই," ফারাবি কাঁপা কণ্ঠে বলে।  

ফারহান হেসে বলে, "তুই নিজেই জানিস না, তুই আমার জন্য কী। আমি তোকে হারাতে পারব না, ফারাবি।"  

মেয়েটি চিৎকার করার চেষ্টা করে, কিন্তু গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের হয় না। ফারহান তার হাত ধরে সামনে টানে।  

ঠিক তখনই রাস্তার মোড়ে রিকশার শব্দ হয়। ফারহান হঠাৎ থেমে যায়। নিজের ভুল বুঝতে পারে। ফারাবির হাত ছেড়ে দেয়।  

"আমি... আমি তোকে কষ্ট দিতে চাইনি," ফারহান বিড়বিড় করে বলে।  

ফারাবি সেই সুযোগে দ্রুত দৌড়ে রিকশায় উঠে পড়ে। তার শরীর কাঁপছে, চোখ ভেজা। রিকশাওয়ালাকে দ্রুত চালাতে বলে।  

---  

বাসায় ফিরে ফারাবি দরজা বন্ধ করে দেয়। বুকে হাত রেখে হাঁপাচ্ছে। আর মনে মনে বলছে, "এভাবে আর কতদিন? আমি আর পারছি না।"  

রিফাত বাড়ি ফিরে এসে ফারাবিকে এমন অবস্থায় দেখে। "কী হয়েছে? তুই এভাবে কাঁপছিস কেন?"  

ফারাবি কিছু বলতে পারে না। কান্নায় ভেঙে পড়ে। রিফাত বুঝতে পারে, এটা ফারহানেরই কাজ।  

"আমি আর চুপ থাকব না," রিফাত গম্ভীর কণ্ঠে বলে। "কালই পুলিশের কাছে যাব। এই ছেলেটাকে শিক্ষা দিতে হবে।"  

---  

প্রেয়সী

পরদিন সকালে, রিফাত সত্যিই পুলিশের কাছে যায়। সব ঘটনা খুলে বলে। পুলিশ অফিসার আশ্বাস দেয়, "আমরা ব্যবস্থা নেব। আপনাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই।"  

ফারাবি কিছুটা স্বস্তি অনুভব করে, কিন্তু মনের গভীরে এখনও অশান্তি। ফারহানের মতো জেদি একজন কি সহজে থামবে? 

অন্যদিকে, ফারহান তার ফ্ল্যাটে বসে। মাথা নিচু, চোখ লাল। নিজের আচরণ নিয়ে সে দ্বিধায় পড়ে গেছে।  

"আমি কী করছি? ওকে এভাবে ভয় দেখিয়ে কি ফিরে পাব?"  

কিন্তু তার ভেতর থেকে আরেকটা কণ্ঠ বলে, "ফারাবি আমার। ওকে ছাড়া বাঁচব কীভাবে?"  

ফারহানের হাত মুঠো করে জোরে চাপ দেয়। সে সিদ্ধান্ত নেয়, "ফারাবিকে আমার করতেই হবে, যে কোনো উপায়ে।"  

রাতে ফারাবি বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকে। মনের মধ্যে অজানা ভয়। রিফাত তাকে আশ্বস্ত করেছে, কিন্তু মেয়েটি জানে, ফারহান এত সহজে পিছু হটবে না।  

ঠিক তখনই বাইরে কারো পায়ের শব্দ শোনা যায়। ফারাবি জানালার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে দেখে ফারহান। 

মেয়েটির বুক ধকধক করে উঠল। সে দ্রুত রিফাতকে ডাকে। কিন্তু রিফাত তখন বাইরে।  

ফারহান দরজায় ধাক্কা দিতে শুরু করে। "দরজা খোল! আমাকে এভাবে দূরে ঠেলে দিতে পারবি না!"  

ফারাবি কাঁপতে কাঁপতে দরজার দিকে এগিয়ে যায়। হঠাৎ ফোনে রিফাতের কল আসে।  

"ভাইয়া, তাড়াতাড়ি আসো! ফারহান আমাদের দরজায়!"  

রিফাত তৎক্ষণাৎ পুলিশ নিয়ে রওনা দেয়।  

---  

অন্যদিকে, ফারহান দরজায় আরও জোরে ধাক্কা দেয়। ফারাবি ভেতরে বসে কাঁদছে।  

"তুই যদি আমার কথা না শোনাস, আমি সব শেষ করে দেব। দরজা খুল!"  

ঠিক তখনই পুলিশের সাইরেন শোনা যায়। ফারহান থেমে যায়।  

রিফাত পুলিশ নিয়ে এসে ফারহানকে আটকায়। "তোর সাহস তো কম নয়। আমার বোনকে এভাবে হুমকি দিচ্ছিস!"  

ফারহান কিছু বলতে চায়, কিন্তু পুলিশ তাকে টেনে নিয়ে যায়। যাওয়ার আগে ফারহান চিৎকার করে বলে, "ফারাবি, এটা শেষ নয়। তুই আমারই থাকবি।"  -  

কিছুদিন পর...  

ফারাবি নিজের জীবনকে ধীরে ধীরে গুছিয়ে নেয়। রিফাত সবসময় তার পাশে থাকে। ফারহান জেলে আছে, আর তার পরিবারের চেষ্টায় মেয়েটি এখন একটু একটু করে স্বাভাবিক হচ্ছে।  

একদিন রিফাত বলে, "তুই আর ভয় পাবি না, বুঝলি? আমি আছি।"  

ফারাবি একটু হাসে। "আমি জানি, ভাইয়া। এবার নিজের মতো বাঁচতে চাই।"  

ফারাবি জানালার ধারে দাঁড়িয়ে ছিল। বাতাসে চুল উড়ছে। আর তার মনে হচ্ছে, এই নতুন সূর্যোদয় তার জীবনের নতুন শুরু।