- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
**একপাক্ষিক ভালোবাসা: নীরবতার গল্প (পর্ব ১)*
তৃষা মজা করে বলল, “আমরা কি কলেজ শেষ হওয়ার পরেও এমন থাকব? না কি সবাই ব্যস্ত হয়ে নিজের জীবনে চলে যাব?”
মেঘলা মুচকি হেসে বলল, “মানুষের জীবনে অনেক কিছুই পরিবর্তিত হয়, তবে যদি সম্পর্কটা সঠিক হয়, তাহলে দূরত্ব কখনোই সমস্যা সৃষ্টি করে না।””
তৃষা চোখ বড় বড় করে বলল, “উফ, তোর কথাগুলো যেন একটা কবিতার মতো শোনায়! সত্যি বল, তুই কখনো প্রেম করেছিস?”
মেঘলা একটু হেসে চোখ নামিয়ে বলল, “সবকিছু জানতে হবে না। কিছু না বলা কথাও থাকুক।”
তৃষার এই কথার মাঝেই অনিক চুপচাপ মেঘলার দিকে তাকিয়ে ছিল। তার মনের ভেতর এক অদ্ভুত যুদ্ধ চলছিল। সে বুঝতে পারছিল, তৃষার সঙ্গে মেঘলার কথা শুনে তার বুকের গভীরে চাপা একটা ব্যথা হচ্ছে। কারণ সে মেঘলাকে ভালোবাসে। কিন্তু সেই অনুভূতিটা কাউকে কখনো বলেনি।
more.....
কলেজ লাইফটা দিন দিন শেষের দিকে এগোচ্ছিল। তাদের আড্ডা, হাসি-মজা সবকিছুই যেন সময়ের সাথে আরও মধুর হয়ে উঠছিল। কিন্তু অনিকের ভেতরে একটা অদ্ভুত চাপ কাজ করছিল। মেঘলাকে সে দিনের পর দিন ভালোবেসে গেছে, কিন্তু কখনো সাহস করে বলতে পারেনি।
একদিন সন্ধ্যায়, মাঠের পাশের গাছটার নিচে বসে ছিল তারা। সূর্যের আলো তখন লালচে আভা ছড়াচ্ছিল। তৃষা তখন গল্পে মগ্ন, আর অনিক মেঘলার দিকে তাকিয়ে ছিল।
তৃষা হঠাৎ বলল, “অনিক, তুই এত চুপচাপ কেন? আজ তোকে একটু আনমনা লাগছে। কিছু বল।”
অনিক হেসে বলল, “না, কিছুই না। আমি তো তোমাদের সঙ্গেই আছি।
মেঘলা বুঝতে পারছিল, অনিকের মধ্যে কিছু একটা চলছে। কিন্তু সে কখনো চাপ দিয়ে কিছু জানতে চায় না। অনিকের স্বাভাবিকতা বজায় রাখার জন্য মেঘলাও মিষ্টি হেসে বলল, “হয়তো ক্লান্ত, তাই চুপচাপ। তুই সবকিছু নিয়ে এত ভেবেছিস যে এখন চুপ থাকা ছাড়া উপায় নেই।”
তৃষা হাসতে হাসতে বলল, “ঠিকই বলেছিস। তবে অনিকের চুপ থাকার কারণটা অন্য কিছু। আমি সেটা টের পাই।”
অনিক তখন অন্যদিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল, “তৃষা, তোর টের পাওয়ার ক্ষমতা একটু বেশি। সবকিছুতেই গল্প বানাস।”
মেঘলা মুচকি হেসে বলল, “মানুষের জীবনে অনেক কিছুই পরিবর্তিত হয়, তবে যদি সম্পর্কটা সঠিক হয়, তাহলে দূরত্ব কখনোই সমস্যা সৃষ্টি করে না।
এই কথায় মেঘলা হেসে উঠে বলল, “তুই কি পাগল? বন্ধুত্বটা কি তোকে এতটাই অদ্ভুত লাগে?”
তৃষা মজা করেই বলল, “হতে পারে। দেখা যাক, ভবিষ্যতে কী হয়!”
---
অনিক বুঝতে পারছিল, তৃষার রসিকতার মধ্যে যেন একটা ইঙ্গিত লুকিয়ে আছে। আর এই ইঙ্গিতটাই তার ভেতরের দ্বিধা আরও বাড়িয়ে তুলছিল। তার কি উচিত হবে মেঘলাকে সব বলে ফেলা? নাকি এই অনুভূতিটা চিরদিন লুকিয়ে রাখা ভালো?
নীরবতার গল্প (পর্ব ২)
দিনগুলো একে একে পেরিয়ে যাচ্ছিল। কলেজের শেষ পরীক্ষার দিন ঘনিয়ে আসছিল। মেঘলা, তৃষা আর অনিকের মধ্যে সেই আগের মতো আড্ডা, হাসি আর গল্প হচ্ছিল ঠিকই, কিন্তু অনিকের মনটা সবসময়ই অস্থির থাকত।
একদিন বিকেলে তৃষা হঠাৎ বলল, "শোন, কলেজ লাইফের এই দিনগুলো শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু এই বন্ধুত্ব যেন কোনোদিন শেষ না হয়। আমাদের গল্পগুলো যেন সারাজীবন স্মৃতি হয়ে থাকে।"
মেঘলা একটু হেসে বলল, "সব কিছু কি আর ধরে রাখা যায় তৃষা? সময়ই সবকিছু ঠিক করে দেয়।"
তৃষা গম্ভীর মুখে বলল, "তাহলে তুই বলছিস, তুই আমাদের ভুলে যাবি?"
মেঘলা একটু চুপ করে থেকে বলল, "ভুলে যাওয়া বা মনে রাখা তো সময়ের উপর নির্ভর করে। তবে মনের গভীরে কিছু মানুষ চিরকাল থেকে যায়।"
তৃষার কথা শুনে অনিকের বুকের ভেতর একটা অদ্ভুত কষ্ট বাজল। তার মনে হলো, মেঘলাকে আজই তার মনের কথা বলবে। হয়তো মেঘলা তার অনুভূতিটা বুঝতে পারবে।
পরের দিন বিকেলে, অনিক মেঘলাকে ফোন করল। "মেঘলা, তুই কি একটু সময় পাবি? তোকে একটা কথা বলতে চাই।"
মেঘলা বলল, "অনিক, তুই এত সিরিয়াস কেন? ঠিক আছে, কোথায় দেখা করব?"
আমাদের আমগাছটার নিচে। সন্ধ্যায়।"
মেঘলা রাজি হলো। কিন্তু তৃষাকে কিছুই জানানো হলো না। অনিক চেয়েছিল, এই কথাটা শুধু মেঘলাকেই জানাবে।
সন্ধ্যায় গাছের নিচে বসে অনিক অপেক্ষা করছিল। গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে চাঁদের আলো ছড়িয়ে পড়ছিল মাটিতে। কিছুক্ষণ পর মেঘলা এসে হাজির হলো। তার চেহারায় চিরাচরিত শান্ত ভাবটা যেন আরও গম্ভীর মনে হচ্ছিল।
"বল, কী বলবি?" মেঘলা সরাসরি প্রশ্ন করল।
অনিক একটু নড়েচড়ে বসে বলল, "মেঘলা, তুই জানিস, তুই আমার অনেক ভালো বন্ধু। কিন্তু…"
"কিন্তু কী?" মেঘলা চোখ কুঁচকে তাকাল।
অনিক এক নিঃশ্বাসে বলল, "আমি তোকে ভালোবাসি। তুই আমার জন্য শুধু বন্ধু না, এর চেয়েও অনেক বেশি। অনেক দিন ধরে তুইকে বলতে চাচ্ছিলাম। আজ সাহস করে বললাম।"
মেঘলা কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তার চোখে কোনো অনুভূতি ধরা পড়ছিল না। তারপর নিচু গলায় বলল, "অনিক, তুই জানিস, তোর কথা আমি সবসময় গুরুত্ব দিই। কিন্তু আমি তোকে ভালোবাসি না। তুই আমার বন্ধু, কিন্তু এর বাইরে কিছু ভাবতে পারি না। আমি তোকে আঘাত দিতে চাই না।"
অনিকের বুকের ভেতরটা যেন ভেঙে পড়ল। সে একরকম জোর করেই মুচকি হেসে বলল, "আমি জানতাম, তুই হয়তো এটাই বলবি। তবে মনের কথাটা তোকে বলা দরকার ছিল। অন্তত তুই আমাকে ভুল বুঝিস না।"
মেঘলা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, "আমি তোকে কোনোদিন ভুল বুঝব না। তুই আমার সবসময় প্রিয় বন্ধু হয়েই থাকবি।"
পরের দিন, তৃষা অনিকের বদলে যাওয়া আচরণ খেয়াল করল। "তুই এত চুপ কেন? কাল তোর কী হয়েছে?"
অনিক বলল, "কিছু না। শুধু ভাবছিলাম, সময় পরিবর্তন হলেও মানুষ কীভাবে একই থাকে?"
তৃষা একটু চুপ করে থেকে বলল, "তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে, তুই মেঘলাকে কিছু বলেছিস।"
অনিক বিস্মিত হয়ে বলল, "তুই কীভাবে বুঝলি?"
তৃষা একটু মৃদু হাসল। "আমি তোদের দু’জনকেই অনেক দিন ধরে চিনি। সবকিছু বোঝা কঠিন নয়। তবে আমি ভাবি, তুই যা করেছিস, সেটা হয়তো ঠিকই করেছিস। মনের কথা না বললে তুই আরও কষ্ট পেতিস।"
তৃষা জানত, অনিকের কষ্ট মেঘলাকে বোঝানো সম্ভব নয়। কিন্তু মেঘলাও কি সত্যি কিছু অনুভব করে না? তৃষার মনে হয়েছিল, মেঘলা হয়তো কিছু একটা লুকাচ্ছে। তবে তার কথাগুলো সরাসরি না বলার অভ্যাসই হয়তো এই সমস্যার কারণ।
এদিকে, মেঘলাও একা নিজের ভেতরে লড়াই চালাচ্ছিল। সে জানত, অনিক তাকে কতটা ভালোবাসে। কিন্তু সে এই বন্ধুত্বের সীমা ভাঙতে চায়নি। সে বুঝতে পারছিল, এই অনুভূতির জটিলতায় তাদের বন্ধুত্বের সুর কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
**একপাক্ষিক ভালোবাসা: নীরবতার গল্প (পর্ব ৩)**
মেঘলা, অনিক আর তৃষার বন্ধুত্বে যেন এক ধরনের চাপা অস্বস্তি এসে ভর করেছিল। মেঘলা চেষ্টা করছিল সবকিছু আগের মতো রাখতে, কিন্তু সে বুঝতে পারছিল, অনিকের দৃষ্টিতে সেই পুরনো স্বাভাবিকতা নেই। তার চুপচাপ থাকা, হঠাৎ অপ্রসঙ্গ টেনে আনা—সবই যেন তাদের বন্ধুত্বের মধ্যে একটা অদৃশ্য দেওয়াল তৈরি করছিল।
একদিন তৃষা সরাসরি মেঘলার কাছে গিয়ে বলল, “তুই আর অনিক এভাবে চুপ থাকলে আমরা সবাই কষ্ট পাব। তোদের বন্ধুত্ব আগের মতো থাকাটা জরুরি।”
মেঘলা খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “তুই যা বলছিস, সেটা বুঝি তৃষা। কিন্তু তোদের কাছে সবকিছু স্বাভাবিক দেখানো যত সহজ মনে হয়, ভেতরে ততটাই জটিল। আমি অনিককে আঘাত দিতে চাইনি, তবু যেন পরিস্থিতি এমন হয়ে গেছে।”
তৃষা একটু রাগের সুরে বলল, “তুই সত্যি জানিস না, তোর এই ‘না বলা’র অভ্যাস আমাদের মধ্যে সমস্যা তৈরি করছে? অনিক তোকে ভালোবাসে, এটা যেমন তার সত্যি, তুইও কি সত্যি করে বলতে পারিস তোর মনে একটুও অনুভূতি নেই?”
মেঘলা হঠাৎ তৃষার দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর ধীরে ধীরে বলল, “আছে… কিন্তু আমি জানি, কিছু সম্পর্ক একটা সীমারেখা ভাঙলে টিকে না। আমি চাই না আমাদের বন্ধুত্বটা নষ্ট হয়ে যাক। এই বন্ধুত্বটাই আমার কাছে সবকিছু।”
তৃষা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, “তাহলে তুই যা করতে চাইছিস, সেটা কর। কিন্তু এটাও বুঝতে হবে, তুই অনিকের সামনে থাকলে ওর কষ্টটা আরও বাড়বে। হয়তো একটু দূরত্বই ওকে শান্তি দেবে।”
মেঘলা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “তুই ঠিক বলছিস। হয়তো দূরে যাওয়াটাই সবার জন্য ভালো হবে।”
---
পরের দিন থেকে মেঘলা ধীরে ধীরে আড্ডা থেকে দূরে সরে যেতে শুরু করল। তার হাসির মাঝে একটা কৃত্রিমতা চলে এসেছিল, যা তৃষা ঠিকই বুঝতে পারত। কিন্তু অনিক? সে মেঘলার এই দূরত্বটা আরও তীক্ষ্ণভাবে অনুভব করছিল।
একদিন বিকেলে তৃষা আর অনিক মাঠের পাশে বসে ছিল। তৃষা হঠাৎ বলল, “অনিক, তুই মেঘলার এই পরিবর্তনটা টের পাচ্ছিস তো?”
অনিক হাসি চাপার চেষ্টা করে বলল, “হয়তো ও ঠিকই করছে। আমার জন্য বন্ধুত্বটাকে চাপের মধ্যে রাখার চেয়ে দূরে থাকা ভালো।”
তৃষা কিছু বলল না। কিন্তু তার মনে হচ্ছিল, এই চুপচাপ থাকা, না বলা কথাগুলোই তাদের বন্ধুত্বের আসল সৌন্দর্যটাকে ধীরে ধীরে মুছে দিচ্ছে।
---
মেঘলার দূরত্ব যেন সময়ের সঙ্গে আরও গভীর হতে লাগল। পরীক্ষার পর কলেজের শেষ দিনটাও এসেই গেল। সেদিন সবাই ক্যাম্পাসে জড়ো হয়েছিল, যেন শেষ স্মৃতিগুলোকে ধরে রাখতে। তৃষা, মেঘলা আর অনিকও মাঠের কোণে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু সেই আগের উচ্ছ্বাসটা কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিল।
তৃষা মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলল, “তোরা দু’জন এমন হলে আমি আমাদের এই বন্ধুত্বকে কীভাবে ধরে রাখব?”
মেঘলা একটু হেসে বলল, “কিছু সম্পর্ক সময়ের সঙ্গে বদলে যায়, তৃষা। তোর আমার বন্ধুত্ব যেমন ছিল, তেমনই থাকবে। তবে...”
মেঘলা কথা শেষ করল না। অনিক সেদিন একবারও মেঘলার দিকে তাকায়নি। তার মনে হচ্ছিল, এই বন্ধুত্বের স্মৃতিগুলোকে বুকের ভেতর একটা গোপন জায়গায় রেখে দেওয়াই ভালো।
শেষবারের মতো সবাই একসঙ্গে ছবি তুলল। মেঘলা বিদায় নেওয়ার সময় অনিককে সরাসরি বলল, “তুই ভালো থাকিস, অনিক।”
অনিক কিছুক্ষণ চুপ থেকে মৃদু হেসে বলল, “তুইও ভালো থাকিস, মেঘলা।”
কথাগুলো খুব সাধারণ ছিল, কিন্তু এর ভেতরে লুকিয়ে ছিল একরাশ না বলা কথা, একরাশ চিরস্থায়ী স্মৃতি।
**একপাক্ষিক ভালোবাসা: নীরবতার গল্প (পর্ব ৪ - শেষ পর্ব)**
কলেজের দিনগুলো শেষ হলো। সবাই নিজের নিজের পথে চলে গেল। তৃষা নতুন শহরে পড়াশোনা চালিয়ে গেল, মেঘলা তার কাজের জন্য অন্য শহরে চলে গেল, আর অনিকও নিজের জীবনে নতুন দিগন্ত খোলার জন্য অন্য কিছু শুরু করল। তাদের গল্প, তাদের বন্ধুত্ব, সবকিছু যেন একে একে অতীত হয়ে গেল। তবে স্মৃতিগুলো এখনও এক কোণে লুকিয়ে ছিল, যেখানে তাদের হাসি, কথা, আর কিছু না বলা কথাগুলো এখনো বাঁচছিল।
তিন বছর পর, একদিন হঠাৎ অনিকের ফোন এল। স্ক্রীনে মেঘলার নামটা দেখতে পেয়ে অনিক অস্থির হয়ে উঠল। তার মনে এক অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করতে লাগল। অনেকদিন পর মেঘলা তাকে ফোন করেছে—এটা তো অবাক করার মতো ব্যাপার। ফোন ধরতেই মেঘলা বলল, “হ্যালো অনিক, কেমন আছিস?”
অনিক এক মুহূর্ত চুপ থেকে বলল, “আমি ভাল আছি, তুই কেমন আছিস?”
মেঘলা একটু হেসে বলল, “আমি ভালো। আসলে কিছু কথা ছিল তোর সাথে। তাই ফোন করলাম।"
অনিক কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে বলল, "কেমন কথা?"
মেঘলা একটু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “তুই জানিস, তোর সাথে যতটা দূরত্ব তৈরি হয়েছিল, আমি ততটাই ভেতরে ভেঙে পড়েছিলাম। তোর কষ্ট আমি অনুভব করতে পেরেছিলাম, কিন্তু তখন কিছু বলতে পারিনি।"
অনিক এক মুহূর্ত চুপ থেকে বলল, "তুই তো বলেছিলি, আমরা শুধু বন্ধু।"
মেঘলা মৃদু হাসল, "হ্যাঁ, সেদিন যা বলেছিলাম, তা সত্যি ছিল। কিন্তু সময়ের সাথে কিছু অনুভূতি বদলে গেছে। আমি জানতাম, তোর অনুভূতি জানলে আমি কষ্ট দেব। তবে, আজ ভাবলাম, তোর সামনে কিছু সত্যি কথা বলি।"
অনিক একটু অবাক হয়ে বলল, “তুমি কী বলতে চাও?”
মেঘলা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, “আমার হৃদয়ে এখনও কিছু কথা জমে আছে। আমি তোকে কখনো বুঝতে পারিনি, কিন্তু এখন বুঝতে পারছি যে, তোর ভালোবাসা আমার জন্য কতটা মূল্যবান ছিল। আমি ভুল ছিলাম, অনিক। তোর মতো একজন বন্ধু, তোর মতো একজন মানুষকে চেনার পর, আমি জানি, তুই আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান মানুষ ছিলে।”
অনিক কিছু বলতে পারছিল না। তার ভেতরে এক ঝড় উঠছিল। মেঘলার এসব কথা তার মনের গভীরে এক অদ্ভুত শূন্যতা তৈরি করছিল। দীর্ঘ সময় পর, অনিক গভীর শ্বাস নিয়ে বলল, “তুই বুঝলি, মেঘলা? তোর ভালোবাসা বলতে কি আমি এই অনুভূতিটাই চেয়েছিলাম?”
মেঘলা হেসে বলল, “এখন বোঝার দেরি হয়েছে। তোর মতো কাউকে কখনো হারাতে চাই না।”
অনিক কিছু সময় চুপ করে থেকে বলল, “মেঘলা, আমি এখন অন্য একটা জীবনের পথে হাঁটছি। তোর কাছ থেকে যা শুনলাম, তা আমার কাছে অনেক বড় উপহার। তুই যদি আগে এসব বলতিস, হয়তো কিছুটা বদলানো যেত। কিন্তু এখন, আমি জানি, আমার হৃদয়ে আর কোনো জায়গা নেই। তুই ছিলে, আছিস, কিন্তু... এখন আমি আমাদের অতীতকে সম্মান জানাচ্ছি।”
মেঘলার গলায় হালকা বিষাদ ছিল, কিন্তু সে জানত, সবকিছুই বদলে গেছে। সে তখন আর কিছু বলল না, শুধু বলল, “আমি শুধু চাই, তুই ভালো থাকিস। সব কিছু যেভাবে হয়েছে, তা সেভাবেই মেনে নিয়েছি। তোর সাথে কথা বলতে পারা, এটা আমার জন্য অনেক বড় ব্যাপার।”
অনিক এক নিঃশ্বাসে বলল, “তুইও ভালো থাকিস, মেঘলা।”
তারা একে অপরকে বিদায় জানিয়ে ফোন রেখে দিল। অনিকের বুকের ভেতর এক অদ্ভুত শান্তি কাজ করছিল। সে জানত, এখন সব কিছু ঠিক আছে। মেঘলা তার মনের কথা বলেছে, আর সে সেই অনুভূতি মেনে নিয়ে তার জীবনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
তৃষা জানতো, একদিন এমন কিছু হবে। সে মেঘলার ও অনিকের সম্পর্কের জটিলতা বুঝতে পেরেছিল, কিন্তু তাকে কখনো কিছু বলার সাহস হয়নি। এই গল্পটার শেষটা এমনই হওয়া উচিত ছিল—অনিক আর মেঘলার মনে এক অদৃশ্য সমঝোতা, বন্ধুত্বের এক অদ্ভুত শক্তি, আর একপাক্ষিক ভালোবাসার অনুভূতির শেষে এসেছে এক শান্তি।
সব কিছুই ঠিক ছিল, কারণ এই তিন বন্ধুর জীবনে এখন এক নতুন অধ্যায় শুরু হতো।
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ