ভুল ঠিকানার ভালোবাসা

তারারা যখন পৃথিবীতে এলো

 

তারা যখন ফিরে এল

বছর ২২৫৭।
পৃথিবী তখন সম্পূর্ণ নতুন এক রূপ নিয়েছে। জনসংখ্যার নিয়ন্ত্রণ, জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা, এবং মহাজাগতিক অনুসন্ধানের মাধ্যমে মানুষ নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রেখেছে। মহাকাশ তখন আর রহস্য নয়; পৃথিবীর মানুষ অন্য গ্রহে বসতি স্থাপন করতে শিখেছে। কিন্তু এ সবের মধ্যেও ছিল এক বিশাল প্রশ্ন—আমরা কি মহাবিশ্বে একা?

তারারা যখন পৃথিবীতে এলো

প্রথম যোগাযোগ

একটি শান্ত রাত। আকাশ পরিষ্কার, তারাগুলো ঝকঝক করছে। হঠাৎ দক্ষিণ-পশ্চিম মহাসাগরে একটি বিশাল আলো দেখা যায়। আলোটি ক্রমে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে এবং অবশেষে প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরে পড়ে।

এই অদ্ভুত ঘটনার পর পৃথিবীর সেরা বিজ্ঞানীরা জড়ো হন। ইউএন ইন্টারগ্যালাক্টিক রিসার্চ ডিভিশনের বিজ্ঞানী ড. আরিয়ান ভট্টাচার্য এই ঘটনার নেতৃত্ব দেন।

ড. আরিয়ান: “আমরা সবসময় অন্য জীবনের খোঁজ করেছি। মনে হচ্ছে, এবার তারা নিজেরাই আমাদের খুঁজে নিয়েছে। প্রস্তুত থাকুন, কারণ আমরা এমন কিছু দেখতে যাচ্ছি, যা আগে কখনো দেখিনি।”

বস্তুটির সন্ধান

দলটি ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং সাগরের তলদেশে একটি বিশাল ধাতব বস্তু খুঁজে পায়। সেটি কোনো গ্রহাণু নয়; এটি একটি অত্যন্ত উন্নত মহাকাশযান। কিন্তু মহাকাশযানের ভেতরে ঢোকার উপায় কেউ জানে না।

হঠাৎই মহাকাশযান থেকে একটি সংকেত আসে। এটি একটি অদ্ভুত ভাষায় কথা বলছিল, যা বুঝতে প্রথমে তারা ব্যর্থ হয়। কিন্তু ড. আরিয়ানের সহকারী, ড. মায়া সেন, সংকেত বিশ্লেষণ করতে শুরু করেন।

মায়া: “এটি ভাষা নয়; এটি একটি গাণিতিক প্যাটার্ন। তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে।”

প্রথম মিটিং

সংকেত পাঠানোর ৪৮ ঘণ্টা পর মহাকাশযানের দরজা খুলে যায়। ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে পাঁচটি জীব। তারা দেখতে ছিল মানুষের মতো, কিন্তু গায়ের রঙ ছিল রূপালী। তাদের চোখ বড়, আর শরীরের ওপর কোনো পোশাক ছিল না।

তারা নিজেদের পরিচয় দেয়।

জীব: “আমরা সায়োনরা। আমাদের গ্রহ ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা বেঁচে থাকার জন্য নতুন বাসস্থানের সন্ধানে এসেছি।”

তারারা যখন পৃথিবীতে এলো

মানবতা বনাম ভয়

মানুষের মধ্যে বিভাজন শুরু হয়। একদল বলে, “আমাদের তাদের সাহায্য করা উচিত। তারা আমাদের ক্ষতি করতে আসেনি।” আরেক দল মনে করে, “তারা আমাদের গ্রহ দখল করার জন্য এসেছে।”

ইউএন কনফারেন্সে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ড. আরিয়ান জোর দিয়ে বলেন:
“যদি তারা আমাদের সাহায্য চাইতে এসে থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত? যদি আমরা আজ তাদের সাহায্য না করি, কাল আমাদের প্রয়োজন হলে কে সাহায্য করবে?”

প্রতারণার ছায়া

কিন্তু পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে, যখন সায়োনদের মধ্যে একজন, জারোক, এক গোপন বার্তা পাঠায়।

জারোক: “আমাদের কথা বিশ্বাস করবেন না। আমাদের লক্ষ্য কেবল বেঁচে থাকা নয়, এই গ্রহ দখল করা। আমরা একটি শক্তিশালী জাতি ছিলাম, কিন্তু যুদ্ধ আমাদের ধ্বংস করেছে। আমরা পৃথিবীকে আমাদের নতুন বাড়ি করতে চাই।”

ড. মায়া এবং ড. আরিয়ান বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। একদিকে তারা মানবতার প্রতি দায়বদ্ধ, অন্যদিকে এই তথ্য তাদের সতর্ক করে তোলে।


তারারা যখন পৃথিবীতে এলো

ক্লাইম্যাক্স: সংঘর্ষের সূচনা

জারোকের বার্তা প্রকাশ পেলে পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। মানুষের বাহিনী সায়োনদের মহাকাশযান ঘিরে ফেলে।

ড. আরিয়ান: “তাদের সবাইকে দোষী মনে করো না। আমরা জানি না, জারোক সত্য বলছে নাকি মিথ্যা। হয়তো সে নিজেই বিশ্বাসঘাতক।”

এই সময় সায়োনদের নেতা, এরিয়া, সামনে আসে।

এরিয়া: “আমরা যা বলেছি, তা সত্য। আমরা একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতি, যাদের পুনরুজ্জীবনের প্রয়োজন। আমাদের কিছু সদস্য, জারোকের মতো, ভুল পথে যেতে চায়। কিন্তু আমাদের সবাই এক নয়। আমাদের সুযোগ দিন।”

মানবতার বড় সিদ্ধান্ত

ড. আরিয়ান এবং ড. মায়া জোর দিয়ে বলেন, “এই গ্রহ আমাদের, কিন্তু এটি কেবল আমাদের নয়। মানবতা যে সঙ্কীর্ণ চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে, সেই প্রমাণ দিতে হবে।”

অবশেষে সায়োনদের জন্য পৃথিবীর একটি দূরবর্তী অঞ্চল বরাদ্দ করা হয়। সেখানে তারা নিজেদের জীবন পুনর্গঠনের সুযোগ পায়।

শেষ বাক্য

মানুষ আর সায়োনদের মধ্যে সহযোগিতার মাধ্যমে মহাবিশ্বের এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়। একে অন্যের প্রতি বিশ্বাস এবং মানবিকতার জয় হয়।